ডেঙ্গুর পর গুলেন–বারিতে আক্রান্ত সিদ্দিকুর এখন অচেতন

সিদ্দিকুর রহমান

স্ত্রী আর দুই শিশুসন্তান নিয়ে সুখের সংসার সিদ্দিকুর রহমান ভূঞার। নিজের করা দরজিদোকানের আয়ে সচ্ছলতার মুখও দেখেছিলেন। হঠাৎ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে সব। ডেঙ্গুর জটিলতা থেকে দুরারোগ্য গুলেনবারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হন তিনি। গুলেনবারিতে আক্রান্ত সিদ্দিকুর অচেতন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। ১৭ দিন ধরে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।

সিদ্দিকুরের চিকিৎসায় পরিবারের সব টাকা শেষ হয়েছে আগেই। সিদ্দিকুরকে বাঁচাতে এখন গণচাঁদা তুলছেন তাঁর বন্ধুরা। সিদ্দিকুর রহমান ভূঞা মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহেদী নগর এলাকার মো. ইউছুপের ছেলে।

সিদ্দিকুর রহমানের বন্ধু ও স্বজনেরা জানান, পেশায় দরজি দোকানি সিদ্দিকুর রহমান ভূঞা শান্ত স্বভাবের মানুষ। স্ত্রী শিমা আক্তার, দেড় বছরের একটি ছেলে ও দেড় মাস বয়সী একটি কন্যাসন্তান নিয়ে সংসার তাঁর। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌরবাজারে ছোট একটি দরজিদোকান আছে তাঁর।

এক সপ্তাহ জ্বরে ভোগার পর স্থানীয় একটি রোগনির্ণয়কেন্দ্রে পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয় সিদ্দিকুরের।

১৯ আগস্ট তাঁকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি হওয়ায় চিকিৎসকেরা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তাঁকে। দুই দিন বাড়িতে থাকার পর আবার তাঁর শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে ২২ আগস্ট মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চার দিন রাখার পর অবস্থার আরও অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু পাওয়া না গেলেও ডেঙ্গুর প্রভাবে তাঁর শরীরে বাসা বাঁধে আরেক জটিল রোগ গুলেন–বারি সিনড্রোম (জিবিএস)।

অবস্থার আরও অবনতি হলে ৩০ আগস্ট সিদ্দিকুরকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকেরা। জিবিএসে আক্রান্ত সিদ্দিকুর এখন অজ্ঞান অবস্থায় আছেন।

সিদ্দিকুর রহমান ভূঞা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ তলার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

সিদ্দিকুরের চিকিৎসার সমন্বয়কারীদের একজন হাসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিদ্দিকুর আমাদের বন্ধু। ডেঙ্গু হঠাৎ তাঁর পরিবারটাকে এলোমেলো করে দিল। ওর চিকিৎসায় এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। পরিবারের যা ছিল, তা আগেই শেষ হয়েছে। আমরা বন্ধুরা তহবিল করে সহযোগিতা করেছি। এখন আর আমাদের পক্ষেও টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সিদ্দিকুরকে বাঁচাতে তাই বাধ্য হয়ে বাজারে গণচাঁদা তুলছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সাহায্য চেয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ছোট দুটি সন্তানের জন্য হলেও সিদ্দিকুরের বেঁচে ফেরা জরুরি।’

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট এম ইয়াছিন আলী তাঁর একটি লেখায় জিবিএস সম্পর্কে বলেছেন, কোনো সংক্রমণজনিত জটিলতা থেকে গুলেনবারি সিনড্রোম হয়। এ রোগ হলে হাত-পায়ে অবশ ভাব বা শক্তিহীন বোধ করে রোগী। কিছু ক্ষেত্রে মাংসপেশি অবশ হয়ে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে প্রাণ হারানোর ঝুঁকিও থাকে।

হাসপাতালে সিদ্দিকুরের দেখভাল করছেন তাঁর ছোট ভাই মিজানুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘ডেঙ্গুর জটিলতা থেকে জিবিএসে আক্রান্ত হয়েছেন ভাইয়া।

তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। আইসিইউতে এখন প্রতিদিন তাঁর চিকিৎসায় ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। এত খরচ বহন করার সামর্থ্য আমাদের পরিবারের নেই। ভাইয়ার বন্ধুরা মিলে নানাভাবে সহযোগিতা করে এখন পর্যন্ত খরচ চালিয়ে নিচ্ছেন। ডেঙ্গু এক অভিশাপ হয়ে এসেছে আমাদের জীবনে।

ভাইকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চাই আমরা।’ সিদ্দিকুরকে সহযোগিতা (বিকাশ—০১৮২৬৪৭০৪৭৫, নগদ—০১৯০৩৮২২৯৯০) করতে পরিবার সমর্থবান মানুষের সহায়তা চেয়েছেন।