বাংলাবান্ধা সীমান্তে ভুট্টাখেতে আশ্রয় নেওয়া হাতি দুটির আক্রমণে একজনের মৃত্যু

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্তে একটি ভূট্টাখেতে দুটি বন্য হাতি অবস্থান করছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় তোলাছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে সকাল থেকেই একটি ভুট্টাখেতে অবস্থান করছিল দুটি বন্য হাতি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাতি দেখতে মানুষ ভিড় করেন। ভুট্টাখেতটি মহানন্দা নদীর পাড়ে। বিকেলে হঠাৎই হাতি দুটি উত্তেজিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। এ সময় জড়ো হওয়া লোকজন দৌড়ে পালালেও হাতির সামনে পড়েন নুরুজ্জামান (২৩) নামের বাক্‌প্রতিবন্ধী এক তরুণ। এ সময় একটি হাতির পায়ের চাপায় গুরুতর আহত হন তিনি। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় তাঁর।

আজ মঙ্গলবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত নুরুজ্জামান ওই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বাক্‌প্রতিবন্ধী ছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। হাতি দুটি ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করছেন সবাই।

এর আগে সকাল সাতটার দিকে দুটি হাতি দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকার নজরুল ইসলামের ভুট্টাখেতে আশ্রয় নেয়। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে হাতি দুটির কাছাকাছি যেতে নিষেধ করে মাইকিং করা হয়।

আরও পড়ুন

এ ঘটনায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ৭৩০ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিজিবির গোয়ালগছ ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েব সুবেদার শফিকুল ইসলামসহ বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি, পঞ্চগড়ের সহকারী বন সংরক্ষক নূরুন্নাহার এবং তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইউনুস আলী উপস্থিত ছিলেন। পতাকা বৈঠকে ভারতের ১৭৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পানেশ্বর-ফাঁসিদেওয়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যদের সঙ্গে ভারতীয় ফরেস্ট সার্ভিসের সদস্যরা অংশ নেন বলে জানা গেছে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তুতির সময় নুরুজ্জামানের মৃত্যু হয়।

দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নজরুল ইসলামের ভুট্টাখেতে হাতি দুটি দাঁড়িয়ে আছে। অল্প দূরত্বেই হাজারো মানুষ হাতি দেখতে ভিড় করেছেন। কেউ কেউ মুঠোফোনে ছবি তোলার চেষ্টা করছেন। তবে স্থানীয় লোকজনের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সেখানে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে হাতি দেখতে আসা লোকজন দিগ্‌বিদিক ছোটছুটি শুরু করেন। কাছে গিয়ে জানা যায়, হাতি দুটি ছোটাছুটি করছে। এ সময় নুরুজ্জামান নামের ওই যুবককে সামনে পেয়ে পা দিয়ে পিষে দেয় একটি হাতি। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসক তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পঞ্চগড় হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তুতির সময় নুরুজ্জামানের মৃত্যু হয়।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রহিমুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যায় ওই যুবককে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠাই। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স আসতে আসতেই তিনি জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। লাশের ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’

সন্ধ্যা ৭টা ৫৪ মিনিটে তেঁতুলিয়ার ইউএনও ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতির আক্রমণে আহত তরুণ মারা গেছেন। আমরা এখনো ঘটনাস্থলে আছি। হাতি দুটি ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি আছে। আশা করছি, হয়তো ভারতে চলেও যেতে পারে। আশপাশের লোকজনকে বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভারতের ওপারে লোকজন আছেন এবং কাঁটাতারের বেড়া খুলে রেখেছেন। আমরা সবার আগে মানুষের নিরাপত্তার কথা ভাবছি। এ ছাড়া ভারতীয় হাতি রেসকিউ টিম আসার বিষয়ে অনুমতির জন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

কাশিমগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, সকাল সাতটার দিকে হাতি দুটি রওশনপুর এলাকার দিক থেকে এই ভুট্টাখেতে আসে। আসার সময় তীরনইহাট ইউনিয়নের দৌলতপাড়া এলাকার সামিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির একটি গরুকে আহত করে। পরে স্থানীয় লোকজন গরুটিকে জবাই করেন। পরে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে জামাল ও শমসের আলী নামের দুই ব্যক্তির বাড়িঘর ভাঙচুর করে পাশের ভুট্টাখেতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে হওয়ায় সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছি। সকাল থেকে হাতি দুইটা বাড়ির পাশের ভুট্টাখেতে আছে। সন্ধ্যা হলে কী হবে, এই ভয় পাচ্ছি। কখন কার ওপর হামলা করে ঠিক নাই। এ জন্য হাতি দুটির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।’

পতাকা বৈঠক থেকে ফিরে পঞ্চগড় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক নূরুন্নাহার বলেন, ‘আমরা বিএসএফ ও ভারতীয় ফরেস্ট সার্ভিস সদস্যদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছি। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের ২০ সদস্যের হাতি রেসকিউ টিম পাঠাবেন। তবে সেই ক্ষেত্রে কিছু আইনি অনুমতির বিষয় আছে। ইতিমধ্যে ঢাকা ও রাজশাহী থেকে আমাদের রেসকিউ টিম রওনা দিয়েছে। তাঁদের আসতে কিছুটা সময় লাগবে।’