মেরামত হয়নি বাঁধ, নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা

খুলনার কয়রা উপজেলার দশালিয়া এলাকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে পাঁচ দিন ধরে জোয়ারের পানি ঢুকছে লোকালয়ে। শুক্রবার কপোতাক্ষ নদের পাড়েছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রা উপজেলার দশালিয়া গ্রামের ভেঙে যাওয়া বাঁধের দুটি স্থান গত পাঁচ দিনেও মেরামত করা যায়নি। প্রতিদিন দুবার কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় গ্রামের পাশের উঁচু রাস্তা ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালে গত ২৬ মে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া এলাকার বাঁধ ভেঙে যায়। এ ছাড়া আরও ১৭টি স্থান দিয়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে নোনাপানি ঢোকে। এরই মধ্যে শুধু দশালিয়া বাঁধটি বাদে বাকি অংশের বাঁধ সংস্কার করে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নোনাপানির প্রবেশ ঠেকিয়ে দেন এলাকাবাসী। তবে ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধ ভাঙার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার পর্যন্ত দশালিয়ায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত হয়নি।

শুক্রবার বিকেলে দশালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রিমালের আঘাতে পাশাপাশি যে দুই স্থানে বাঁধ ভেঙেছিল, তার পরিধি বেড়েছে। সেখান দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। ওই ভাঙনের কারণে গ্রামের ৬০টির মতো পরিবার পাঁচ দিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ভাটার সময় কিছুটা স্বস্তি পেলেও প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে তাঁদের ঘরের বারান্দা অবধি ডুবে যাচ্ছে। এর মধ্যে পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গবাদিপশু রাখা হয়েছে বাঁধের ওপরে। সেখানকার পাঁচ শতাধিক চিংড়িঘের জোয়ারের পানিতে একাকার হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া স্থান দিয়ে ভাটায় নেমে যাওয়া পানির সঙ্গে ঘেরের চিংড়িও চলে যাচ্ছে নদীতে।

গ্রামের দীনবন্ধু মিস্ত্রি বলেন, ‘এভাবে আর পারা যায় না। এত দুর্দশা সামাল দেব কেমনে? একদিকে ঘের ভেসে গেছে, আরেক দিকে প্রতিদিন দুবার বাড়িঘর ডুবছে। শুনিছি সব এলাকার বাঁধ মেরামত হয়ে গেছে। অথচ কিছু বালুর বস্তা আর বাঁশের জন্যি আমাগের বাঁধটা মেরামত হলো না।’

দশালিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত বুধবার এলাকার তিন শতাধিক মানুষ বাঁধ মেরামতে এগিয়ে আসেন। ওই দিন দুপুরের জোয়ারের আগে বাঁধের ভাঙা স্থানে মাটি ফেলে উঁচু করা হয়। তবে বাঁধের দুই পাশ সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় বাঁশ ও বালুর বস্তা না থাকায় জোয়ারের চাপে তা ভেঙে যায়। এরপর আর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ভাঙনের পানি একটি নির্দিষ্ট স্থানে আটকে রাখা হয়েছে। গ্রামের তিন পাশে ইটের সলিংয়ের রাস্তার ওপরে মাটি দিয়ে উঁচু করায় অন্য এলাকা এখনো প্লাবিত হয়নি। তবে এভাবে আর কিছুদিন থাকলে ওই সব রাস্তা ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন

দশালিয়ার পাশে গোবিন্দপুর ও আটরা গ্রাম। ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা দশালিয়ার ভাঙনে প্লাবিত হওয়ার ভয়ে রয়েছেন। নিজেদের স্বার্থে ভাঙন মেরামতে তাঁরাও এগিয়ে গিয়েছিলেন; কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ও খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এখন মরা কটালের সময় নদীতে জোয়ারের চাপ কম। এই সময় বাঁধটি মেরামতের উপযুক্ত সময়। ভরা কটালে নদীতে জোয়ারের চাপ বাড়বে। তখন ওই বাঁধ মেরামত কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন

শুক্রবার দশালিয়ার ভাঙন পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে দশালিয়া এলাকার বেড়িবাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু অসুবিধার কারণে এত দিন চেষ্টা করেও বাঁধটির মেরামতকাজ সম্পন্ন করা যায়নি। এ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শনিবার থেকে মেরামতকাজ শুরু করা হবে।