ছাত্রী ও মায়ের লাশ উদ্ধার
মানববন্ধনে যাওয়ার জন্য বাস না পেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তাঁর মা তাহমিনা বেগমকে কুমিল্লা নগরের ভাড়া বাসায় হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে কুমিল্লা নগরে মানববন্ধনে যাওয়ার জন্য বাস না পেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বাসের দাবি জানালে প্রশাসন বাস দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন।
এর আগে আজ সকাল সাতটার দিকে নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরি এলাকার পিটিআই মাঠসংলগ্ন ‘নেলী কটেজ’ নামের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সময় ওই বাসায় তাঁরা দুজনই ছিলেন। নিহত তাহমিনা বেগম কুমিল্লা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী। আর সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে পড়তেন।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা কুমিল্লা শহরে মানববন্ধনে যাওয়ার জন্য বাস চেয়েছি। রেজিস্ট্রার আমাদের বলেন, “তোমরা আন্দোলন করবে এর জন্য কি প্রশাসন বাস দিতে দায়বদ্ধ নাকি? তোমরা এই ছোটখাটো বিষয়ের জন্য বাস চাইতে পারো না।”’ এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিচারের দাবি জানাব। এ জন্য আমরা তো একটা বাসই চেয়েছি। তিনি এমন কথা কীভাবে বলেন? তাঁর এমন কথা শুনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ইতিমধ্যে একটি বাস দেওয়া হয়েছে। সকালে আমাদের প্রশাসন থেকে ঘটনাস্থলে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর গেছেন। আরেকটি বাস দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এর মধ্যেই একটা ভুল–বোঝাবুঝি হয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টিকে ছোট করে দেখছি না। আমাদের শিক্ষার্থীকে তাঁর মা–সহ হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই জোড়া খুনে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
বেলা তিনটার দিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন, ‘বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শান্ত করা হলে তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিয়েছেন। এখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসেছি। তাঁদের দাবিগুলো আমরা শুনছি। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে।’
ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিতভাবেই মা ও মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তবে খুনের কারণ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। গতকাল রোববার মধ্যরাতে মা ও বোনকে হত্যার বিষয়টি টের পান নিহত তাহমিনা বেগমের ছেলেরা।
বিচার দাবিতে সহপাঠীদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তাঁর মা তাহমিনা বেগমকে কুমিল্লা নগরের ভাড়া বাসায় হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার ও রহস্য উদ্ঘাটিত না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ এবং কুমিল্লা নগর অচল করে দেওয়া হবে।
কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা ‘প্রশাসন অথর্ব, পুলিশ অথর্ব’; ‘তুমি কে আমি কে, সুমাইয়া, সুমাইয়া’; ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাইরে’; ‘জবাব চাই, জবাব চাই, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘বিচার চাই, বিচার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সুমাইয়ার অনেক সহপাঠী কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সুমাইয়ার সহপাঠী মুনিয়া আফরোজ বলেন, ‘আমাদের সহপাঠীকে হারানোর কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমাদের দুটি দাবি প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রথমত, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তথা মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’
মেহেদী হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় মহাসড়ক ও কুমিল্লা নগর অচল করে দেওয়া হবে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করলে আমরা গিয়ে কথা বলেছি। তাদের আশ্বস্ত করেছি, এ ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশ। এ ছাড়া আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’