টাঙ্গাইলে বাবা হত্যা মামলার আসামি ওয়াহেদ দুই দিনের রিমান্ডে

বাবাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ওয়াহেদ আলী
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যার মামলার একমাত্র আসামি ছেলে ওয়াহেদ আলীকে (৩২) দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে সখীপুর থানা পুলিশ টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে আবেদন করলে বিচারক পশুপতি বিশ্বাস দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাবাকে হত্যার পাশাপাশি এক চাচি ও চাচাতো ভাইয়ের হত্যার বিষয়েও ওয়াহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আরও পড়ুন

গত রোববার রাতে ওয়াহেদ আলী নিজ বাড়িতে তাঁর বাবা আবদুস সামাদ আলীকে (৫৫) কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী এলাকা থেকে ওয়াহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত বাবা ও গ্রেপ্তার ছেলে উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের বিন্যাওয়ারী পাড়ার বাসিন্দা।

ওয়াহেদ আলীর রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার বিকেলে সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত রায় প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই আবদুর রশিদ বাদী হয়ে ভাতিজা ওয়াহেদকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও মামলার বাদী সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ১৭ বছর আগে ওয়াহেদ তাঁর চাচি কোহিনুর আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন। ওই সময় ওয়াহেদের বয়স কম হওয়ায় আদালত তাঁকে কিশোর সংশোধনকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। সাত বছর আগে এক চাচাতো ভাইকে হত্যার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়াহেদ এলাকায় মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। গত রোববার বিকেলে তিনি মায়ের কাছে টাকা চান। টাকা না পেয়ে মাকে মারতে দা নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন ওয়াহেদ। ছেলের ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান মা। পরে রাতে বাবা সামাদ আলী বাড়িতে ফিরলে তাঁকে কুপিয়ে পালিয়ে যান ওয়াহেদ। পরে স্থানীয় লোকজন রাত ১১টার দিকে বাড়ির রান্নাঘরে সামাদের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন।

মামলার বাদী আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনুমানিক ১৭ বছর আগে ওয়াহেদ মাদ্রাসায় পড়তেন। ওই সময় আমার স্ত্রীর বোনকে ওয়াহেদ প্রেমের প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে আমার স্ত্রী ওয়াহেদের বাবার কাছে বিচার দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার স্ত্রী কোহিনুরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন। বয়স কম থাকায় আদালত ওয়াহেদকে কিশোর সংশোধনকেন্দ্রে পাঠান। সেখান থেকে ফিরে ছয় মাসের মাথায় সে আমার ভাতিজা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া রুবেলকে খুন করেন। তবে ওই সময় ওয়াহেদের নাম মামলায় আসেনি। অজ্ঞাত আসামি থাকায় বিষয়টি এলাকায় নিষ্পত্তি হয়।’

একের পর এক হত্যার ঘটনায় ওয়াহেদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান স্থানীয় বাসিন্দারা। বড়চওনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুবেল মিয়া বলেন, ওয়াহেদ এলাকায় মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত। তাঁর ফাঁসির দাবিতে এলাকাবাসী আগামী শুক্রবার মানববন্ধনের কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছেন।

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, ‘মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। বাবাকে খুন করা ছাড়াও গ্রেপ্তার ওয়াহেদের বিরুদ্ধে চাচি ও চাচাতো ভাইকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। রিমান্ডে আসা ওয়াহেদের কাছ থেকে তিনটি খুনের বিষয়েই তথ্য উদ্ধারে চেষ্টা করা হবে।’