বাবার ঋণের কারণে তুলে নেওয়া ছেলেকে উদ্ধার, দাদির মামলা

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীর চারঘাটে বাবার ঋণের কারণে তুলে নেওয়া ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মো. সোহান নামের এক ব্যাক্তির বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটিকে সেনাবাহিনী ও চারঘাট থানার পুলিশ উদ্ধার করেছে। আজ সোমবার তাঁর দাদি হোসনে আরা বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছেন। মামলায় সোহানসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে হোসনে আরা দাবি করেন, তাঁর ছেলে মো. সেলিমের সঙ্গে সোহানের ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে সোহান তাঁর ছেলের ক্ষতির পাঁয়তারা করছিলেন। গত শনিবার তাঁর নাতি সীমান্ত হোসেনকে সোহেল আরও দুই–তিনজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সহযোগিতায় অপহরণ করেন। সীমান্তের খালাতো ভাই নিশাত (১৯) বিষয়টি তাঁদের জানান। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, সীমান্তকে চারঘাটের ফরিদপুর এলাকার বসতবাড়িতে আটকে রেখেছেন সোহান। চারঘাট থানার পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে চারঘাট থানার পুলিশ ও চারঘাট খানা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সীমান্তকে উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন

অপহরণের শিকার সীমান্ত হোসেন কারিগরি বোর্ডের অধীনে রাজশাহী নগরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গতকাল তার একটি পরীক্ষা ছিল। অপহৃত হওয়ার কারণে তার সেই পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় গতকাল প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘বাবার ঋণ আদায়ে তুলে নেওয়া হলো ছেলেকে, পরীক্ষা দিতে পারল না’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার পরপরই অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঋণগ্রস্ত হয়ে এ বছরের গোড়ার দিকে সেলিম হোসেন সপরিবার আত্মগোপনে চলে যান। এর আগে আত্মগোপনে থাকার কারণে ছেলের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ১০ এপ্রিল পরীক্ষার দিন ছিল। আত্মগোপনে থেকেই ছেলের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাজশাহী নগরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করান। পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল রাজশাহী নগরের লোকনাথ উচ্চবিদ্যালয়ে। সেই কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সেলিম হোসেনের ছেলে রাজশাহী শহরে তার খালার বাড়িতে এসেছিল। এর মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে তুলে নেওয়া হয়। ফলে সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।

গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সোহান প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছিলেন, তিনি সেলিমের ছেলেকে আটক করেছেন এবং তাঁর জিম্মায় যত্নসহকারে রেখেছেন। তিনি দাবি করেন, সীমান্তের বাবা সেলিম হোসেন তাঁর কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এই টাকা তাঁর নিজের নয়, তিনি অন্য জায়গা থেকে ঋণ করে এনে দিয়েছিলেন। এ জন্য আরও ১৪ লাখ টাকা তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। এ–সংক্রান্ত সব প্রমাণপত্র তাঁর কাছে আছে। এলাকার অনেক মানুষ সেলিম হোসেনের কাছে টাকা পাবেন।