স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন নিজেরা আগুন দিয়ে বিএনপিকে দোষ দিচ্ছে: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী
বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপনের (ট্রাক প্রতীক) লোকজন বিভিন্ন স্থানে আগুন দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
তিনি বলেন, ‘আগুন তারা (স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন) নিজেরা লাগাচ্ছে এবং খামাখা বিএনপিকে দায়ী করছে। এটা কিন্তু বিএনপি করেনি। এটা করেছে ট্রাক প্রতীকের লোকেরা। ট্রাকে যারা ভর করেছে, ট্রাকের যারা উপদেষ্টা—এটা কিন্তু তাদের বুদ্ধি।’
আজ শনিবার বিকেলে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাহিদ ফারুক এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে একই জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলা ও হুমকির অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপন। তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এবং তাঁর সমর্থকেরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের উলালবাটনা গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়িসংলগ্ন নির্বাচনী ক্যাম্পে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পর একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগে তুলে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন জাহিদ ফারুক ও সালাহউদ্দিন রিপন।
সকালে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন বলেন, নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা গতকাল রাতে তাঁর প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরসহ কর্মীদের মারধর করেন। দুজন হামলাকারীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ঘটনার সময় তিনি বরিশাল নগরে থাকায় হামলা থেকে বেঁচে যান। গতকাল রাতের ঘটনার পর তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ঘটনায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজাল হোসেন কেন্দ্রে না যেতে এক নেতাকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি প্রশাসনের প্রতি ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের দাবি করেন।
বিকেলে একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করেন জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, নৌকার কর্মীরা গতকাল রাতে ওই পথ (উলালবাটনা) দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় পেছনে থাকা মোটরসাইকেলটির ওপর হামলা করেন ট্রাক প্রতীকের কর্মীরা। পরে পরিকল্পিতভাবে নিজেদের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে নৌকার কর্মীদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে।
জাহিদ ফারুক বলেন, ২ জানুয়ারি পর্যন্ত বরিশাল-৫ আসনের পরিবেশ শান্ত ছিল। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর (সাদিক আবদুল্লাহ) মনোনয়ন উচ্চ আদালতে চূড়ান্তভাবে বাতিল হলে ওই প্রার্থীর সমর্থকেরা ট্রাক প্রতীকের ওপর ভর করেছেন। এরপর থেকে বরিশালে ট্রাক প্রতীকের সমর্থকেরা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। মূলত ট্রাক প্রতীকের ওপর ভর করে বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন অরাজকতা করছেন।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ বরিশাল চাই। আমরা মনে করি, বিভিন্ন স্থানে বিএনপি আগুন দিচ্ছে। কিন্তু বরিশালে এখনো এ ধরনের কর্মকাণ্ডের খবর পাইনি। গতকাল নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে আগুন লাগিয়ে তারা বিএনপিকে দোষ দিচ্ছে। এর কারণ হলো তারা গতকাল রাতে আমার কর্মীদের মারধর করেছে। নিজেদের কার্যালয়ের চেয়ার ভেঙে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। এরপর আগুন দিয়েছে। এর সঙ্গে গভীর যোগসূত্র রয়েছে। এ জন্যই এই কথা বলেছি। এটা বিএনপি করেছে বলে আমরা মনে করছি না। এটা ট্রাক প্রতীকের লোকেরা, ট্রাক প্রতীকের দুই উপদেষ্টা আছে, তারাই করেছে।’
ভোটারদের উদ্দেশে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘আপনারা এদের প্রতিহত করুন। আমরা বরিশালের শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে চাই, এটা আপনাদের বুঝতে হবে। আপনাদের বিবেক দিয়ে বিচার করতে হবে, এটা কারা করতে পারে। আপনারা গত পাঁচ বছর কী পরিবেশের ভেতরে ছিলেন, কী পরিবেশের ভেতর দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। আমরা নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আহ্বান জানাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, যাতে সাধারণ মানুষ কেন্দ্রে এসে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন। আমরা এই বিশৃঙ্খলা বরদাশত করব না।’
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক। এখানে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় নির্বাচন কমিশন তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে। পরে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিলেও তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ বহাল থাকায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়েন। পরে সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপনকে সমর্থন দেন। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিনের মঞ্চে উঠে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানান। এর পর থেকেই আসনের নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল হতে শুরু করে।