প্রখর রোদ থাকলেও সিলেটে বন্যার পানি কমছে ধীরগতিতে

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার অনেক গ্রামের বাসিন্দা এখনো পানিবন্দী। আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উপজেলার জলকরকান্দি গ্রামেছবি: সুমনকুমার দাশ

সিলেটে তিন দিন ধরে প্রখর রোদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। তবে বন্যার পানি কমছে ধীরগতিতে। আজ রোববার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলার প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, হাওরসহ সিলেটের নিচু এলাকা এখনো পানিতে পরিপূর্ণ। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের জুড়ী ও মনু নদের পানি সিলেটের কুশিয়ারা নদীতে যুক্ত হচ্ছে। তাই বৃষ্টি কমলেও কুশিয়ারা নদীর পানি নামছে ধীরগতিতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের উপশহর, তেরোরতন, সোবহানীঘাট, টুকেরবাজারসহ কিছু এলাকা ছাড়া সব কটি এলাকা থেকেই পানি নেমে গেছে। তবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উপজেলাগুলোয় পানি কমতে শুরু করায় পানিবাহিত রোগব্যাধি বাড়ছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ বেলা একটা পর্যন্ত সিলেট নগর ও ১৩টি উপজেলায় ১ হাজার ৪৪৯টি গ্রাম প্লাবিত ছিল। বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ লাখ। ৩১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ১৯ হাজার ৭৩৮ জন মানুষ আছেন।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বন্ধ পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে প্রথম দফায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, মায়াবী ঝরনাসহ উপজেলার অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, গোয়াইনঘাট পর্যটনকেন্দ্রে নৌ চলাচলে যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় নৌকার মালিকদের চালক ও যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। জাফলং ও পিয়াইন নদের পানির গভীরতা ও স্রোত বিবেচনায় সাঁতার না জানা এবং ১২ বছরের কম বয়সীদের নৌকায় না ওঠাতে বলা হয়েছে। পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার থেকে উপজেলা প্রশাসন, থানা–পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌকার চালক ও মালিক পর্যটনকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

একইভাবে জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল পর্যটনকেন্দ্রও আজ বেলা চারটা থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে বলে ইউএনও উম্মে সালিক রুমাইয়া জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার অনেক গ্রামের বাসিন্দা এখনো পানিবন্দী রয়েছেন। আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় উপজেলার ভাঙ্গি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে নগরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ধনকান্দি, পাঁচঘরি ও ছড়ারপাড় এলাকার ২৫০টি বন্যাকবলিত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। মেয়র বলেন, নগরের বন্যাকবলিত কোনো মানুষই ত্রাণসহায়তা থেকে বাদ পড়বেন না। সিটি করপোরেশনে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে। যত দিন বন্যার পানি না কমবে, তত দিন পর্যন্ত ত্রাণসহায়তা অব্যাহত থাকবে।

দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি কমায় বন্যার ক্ষতগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর এলাকায় ভাঙাচোরা সড়কে ভোগান্তি নিয়ে চলছে যানবাহন। বন্যায় দামরি হাওরের পানি উপচে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে মানুষকে কষ্ট করে চলাচল করতে হচ্ছে। বন্যার পানিতে তোয়াকুল বাজার, নোয়াগাঁও এলাকার সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া তোয়াকুল ইউনিয়নের পেকেরখাল এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে এখনো বন্যার পানি বইতে দেখা গেছে।

সালুটিকর সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আগে পানির লাগি গাড়ি চালাইতে পারছি না। আর এখন ভাঙা রাস্তার লাগি গাড়ি চালাইতে পাররাম না।’ গোয়াইনঘাটের কদমতলা গ্রামের সোহেল আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা পানিত ভাসি, পানি কমলে ভাঙা রাস্তাত ভোগান্তিত পড়ি।’

আরও পড়ুন