ধর্ষণচেষ্টার কথা প্রকাশ করে দিতে চাইলে হত্যা করা হয় নোয়াখালীর স্কুলছাত্রীকে

নোয়াখালী শহরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

ধর্ষণচেষ্টার কথা পরিবারের সদস্যদের প্রকাশ করে দিতে চাইলে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয় নোয়াখালীর স্কুলছাত্রীকে (১৪)। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে গলা ও হাতের রগ কেটে দেওয়া হয়। এরপর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘরের জিনিসপত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রাখা হয়।

আজ শনিবার বিকেলে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছেন ওই স্কুলছাত্রীর সাবেক গৃহশিক্ষক আবদুর রহিম ওরফে রনি (২৮)।

সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এমদাদের আদালতে এ জবানবন্দি দেন তিনি। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। এ সময় নিহত ছাত্রীর মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জবানবন্দির বর্ণনা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছাত্রীর মা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার নিজ বাসা থেকে ওই স্কুলছাত্রীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে শহরের একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, খুন হওয়ার পর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁরা গোপন সূত্রে জানতে পারেন, একসময় ওই ছাত্রীর গৃহশিক্ষক ছিলেন আবদুর রহিম। তার ঘাড়ে ও গলায় নখের আঁচড় রয়েছে বলেও জানতে পারে পুলিশ। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে একই এলাকার নিজ বাসা থেকে আবদুর রহিমকে আটক করা হয়। তাঁর শরীরে আঁচড় বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহিম প্রথমে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। এরপর গতকাল শুক্রবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরও বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আবদুর রহিম স্বীকার করেন, তিনি একসময় ওই ছাত্রীকে পড়াতেন। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যে তাদের বাসায় যেতেন। একই ভবনে আবদুর রহিমের এক আত্মীয়ের বাসা রয়েছে। সেখানেও বিভিন্ন সময় যেতেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে তিনি ওই ছাত্রীর বাসায় যান। কড়া নাড়লে ওই ছাত্রী দরজা খুলে দেয়। তখন তিনি ভেতরে বসে কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় নিজেকে রক্ষা করতে আবদুর রহিমের ঘাড়ে ও গলায় আঁচড় দেয় সে। তখন তিনি তাকে ভেতরের কক্ষে নিয়ে ওড়না দিয়ে দুই হাত বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ সময় ওই স্কুলছাত্রী সবাইকে ঘটনা জানিয়ে দেওয়ার কথা বলে।

জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে বালিশচাপা দিয়ে স্কুলছাত্রীকে হত্যা করেন আবদুর রহিম। পরে রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে তার গলা ও হাতের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাতের বাঁধন খুলে দেন। এরপর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে আলমারির কাপড়চোপড় ও অন্যান্য কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে ভেতরের কক্ষের দরজা লক করে ও বাসার মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আসামি আবদুর রহিম জিজ্ঞাসাবাদে এ–ও জানিয়েছেন, তিনি টেলিভিশনে ক্রাইম প্যাট্রল অনুষ্ঠান দেখেন। এসব অনুষ্ঠানের মতো করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আদালতে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার পর আসামি আবদুর রহিমকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার বাকি দুজনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঘটনার পারিপার্শ্বিকতার বিষয়টি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার পুলিশ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তানদের এভাবে একা বাসায় রেখে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। বাসায় আমরা কাদের আসা-যাওয়ার সুযোগ দেব, সেটিও ভাবতে হবে।’

আরও পড়ুন