চাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় গম্ভীরা নিয়ে হাজির প্রার্থীরা

ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরার মাধ্যমে চাকসু নির্বাচনের ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীরা। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনেছবি: জুয়েল শীল

কেউ গান গাইছেন, কেউবা হাস্যরসাত্মক অভিনয় করছেন। দর্শকেরাও ভিড় জমাচ্ছেন একে একে। হাসি, তালি আর উল্লাসে মুখর চারপাশ। এত কিছু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন ঘিরে। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এভাবেই ‘গম্ভীরা’ পরিবেশন করেন প্রার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ চিত্রের। সেখানে অংশ নিয়েছেন অন্তত আটজন প্রার্থী। তাঁদের একজন নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উলফাতুর রহমান। তিনি চাকসু নির্বাচনে সহসাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে লিফলেট নিয়ে ঘুরছিলাম, কিন্তু শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা সামনে রেখে ব্যস্ত। পরে ভাবলাম, শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য আলাদা কিছু করতে হবে। তাই গম্ভীরার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।’

আয়োজকেরা জানান, গম্ভীরা বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় লোকনাট্য ও লোকগীতি ধারার নাম। এটি একধরনের সংলাপভিত্তিক গান। এতে হাস্যরস ও ব্যঙ্গের মাধ্যমে সামাজিক, রাজনৈতিক বা নৈতিক বার্তা দেওয়া হয়। সাধারণত এতে ‘নানা’ ও ‘নাতি’ নামে দুই চরিত্র থাকে। তাঁরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমাজের সমস্যা বা রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, এতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগের। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সহসাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম জসিম (জশদ জাকির); সহসাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম; নবাব ফয়জুন্নেসা হলের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী প্রত্যাশা চাকমা; খালেদা জিয়া হলের নির্বাহী সদস্য প্রার্থী শর্মিলা ইয়াসমিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের মানুষ কৌতুক বা গম্ভীরা করেন, এটা সংস্কৃতিরই অংশ। তাই ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে ও নিজস্ব সংস্কৃতিকে জানান দিতে এ আয়োজন করেছেন। এ পরিবেশনার জন্য তাঁরা চার দিন অনুশীলন করেছেন।

ব্যতিক্রম এ আয়োজন দেখে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরাও। জানতে চাইলে ফাইন্যান্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সানজিদা নিগার বলেন, ‘চাকসু নির্বাচনে সবাই লিফলেট বিতরণ করছে, কিন্তু গম্ভীরা পরিবেশন করে প্রচারটা একেবারেই ভিন্ন। গান, নাটক—সব মিলে উৎসবমুখর একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমাদের ভালোই লেগেছে। তবে তাঁদের ইশতেহারটা জেনে তারপরই ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেব।’

আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তম চাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে ৩৫ বছর পর। একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে হল সংসদ নির্বাচনও। আগামী ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাকসু নির্বাচনের ভোট হবে। এরপর শুরু হবে গণনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী চাকসু ও হল সংসদে চূড়ান্ত প্রার্থী আছেন ৯০৭ জন। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। হল সংসদে নির্বাচন করবেন ৪৮৬ জন। নির্বাচনে ভোটার ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন।

আরও পড়ুন