উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই রোহিঙ্গা নিহত
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা ও গুলিতে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ওই আশ্রয়শিবিরে জি-৪ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক (৩০) ও তাঁর স্বজন রফিক উল্লাহ (৩৪)। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মো. ইয়াসিন (২৮) নামে আরও একজন রোহিঙ্গা। আজ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া একটার দিকে আশ্রয়শিবিরের জি ব্লকে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ১৫-১৭ জন সন্ত্রাসী মোহাম্মদ রফিককে ঘরে ঢুকে গুলি করে এবং রফিক উল্লাহকে রাস্তায় গুলি করে পালিয়ে যায়। রফিক উল্লাহকে গুলি করার সময় মো. ইয়াসিনও গুলিবিদ্ধ হন। নিহত দুই রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পুলিশের সোর্স হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্প্রতি আরসার কয়েকজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছিল।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জেরে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১৫-১৬ জন সন্ত্রাসী আজ বেলা একটার দিকে এই দুজনকে গুলি করে। বিকেলে নিহত দুজনের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। গুলিতেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। দুজনের বুক, পেট এবং কোমরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা জানান, নিহত দুই রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর সমর্থক ছিলেন। নবী হোসেন বাহিনীর সঙ্গে আরসার চরম বিরোধ রয়েছে। আরসার সন্ত্রাসীদের অবস্থান, কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নিহত দুইজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে আসছিলেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে আরসার বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ধরাও পড়েছে। মোহাম্মদ রফিক ও রফিক উল্লাহকে হত্যার ঘটনায় আশ্রয়শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রোহিঙ্গা নেতারা জানান, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উখিয়ার তাজনিমারখোলা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৯) ডি ব্লকে আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন হাফেজ মাহবুব (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা। হাফেজ মাহবুব আরসার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সন্ত্রাসীদের অবস্থান এবং মাদক চোরাচালানের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছিলেন। এ কারণে সন্ত্রাসীরা মাহবুবকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পাশের বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১২) জি-৭ ব্লকের পাশে পাহাড়ি ঢালুতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
পুলিশ জানায়, গত ১৬ মার্চ উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮) মাহবুবুর রহমান (৩৫) নামে আরেকজন রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণের পর ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৫ মার্চ একই আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) পৃথক দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় আবদুর রশিদ (৩০) নামে আরেকজন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, গত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৩৫ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ৮ জন আরসার, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।
আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন, আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বশত্রুতার জেরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গোলাগুলি-সংঘর্ষ ও খুনোখুনিতে লিপ্ত আছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে।