দুপুরে ছাত্রলীগ বের করে দিল, সন্ধ্যায় তুলে দিল হল প্রশাসন

ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা এক শিক্ষার্থীকে কক্ষ থেকে বের দিয়েছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিছানাপত্র নিয়ে ওই কক্ষের সামনে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলে। সন্ধ্যায় অবশ্য তাঁকে পুনরায় কক্ষে তুলে দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে হলের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের নেতারা ওই শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর হল প্রশাসন আবার তাঁকে ওই কক্ষেই তুলে দেয়। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মাহতাব উদ্দিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

মাহতাবের অভিযোগ, শামসুজ্জোহা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংস্কৃত বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মোমিন ইসলাম এবং হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার শাহরিয়ার আজ দুপুরের দিকে তাঁকে হল থেকে বের করে দেন। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের অনুসারী।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, তিনি ওই হলের ১৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি হল প্রাধ্যক্ষ তাঁকে ৩২৬ নম্বর কক্ষ পুনরায় বরাদ্দ দেন। গতকাল বুধবার বিকেল থেকেই ওই কক্ষে অবস্থান করছিলেন তিনি। হঠাৎ আজ দুপুরে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিন ইসলাম ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে বের করে দিয়ে ছাত্রলীগের আরেক নেতাকে কক্ষে তুলে দেন। এ সময় মাহতাবের বিছানাপত্রও বারান্দায় ফেলে দেন তাঁরা।

মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘দুপুরে হল ছাত্রলীগের নেতা মোমিন ও তাঁর অনুসারীরা আমাকে জোরপূর্বক কক্ষ থেকে বের করে দেন। এ সময় তাঁরা আমার টি-শার্ট ধরে টানাটানি করেন এবং হুমকি দেন, যেন আমি কক্ষ ছেড়ে চলে যাই।’

আরও পড়ুন

পরে সন্ধ্যার দিকে মাহতাবকে তাঁর বরাদ্দকৃত কক্ষে তুলে দেয় হল প্রশাসন। আজ সন্ধ্যায় মাহতাব মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কক্ষ দখলকারীরা তাঁদের জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেছেন। আমি এখন আমার মালামাল নিয়ে ওই কক্ষে অবস্থান করছি।’

শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ ইকরামুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। মাহতাবকে তাঁর বরাদ্দ পাওয়া আসনে তুলে দিয়েছি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সারোয়ার জাহান বলেন, ‘আমি মাহতাবকে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ১৫ মিনিট পরে ঘটনাস্থলে আসি। তারপর দেখি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন। মাহতাব তাঁর হলের আবাসিকতার কার্ড দেখালেও তাঁর জিনিসপত্র ফেলে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।’

আরও পড়ুন

তবে অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ নেতা মোমিন ইসলাম। তিনি বলেন, হল প্রাধ্যক্ষ একজনকে বরাদ্দ দিতে গিয়ে কক্ষটি অন্যজনকে বরাদ্দ দিয়েছেন। যাঁকে ওই কক্ষে ওঠানো হয়েছে, তাঁর আগে থেকেই আবাসিকতার কার্ড রয়েছে। এই হল প্রাধ্যক্ষ যাঁরা ছাত্রলীগ করেন, তাঁদের সঙ্গে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করেন। তবে তাঁরা কাউকে টেনেহিঁচড়ে বের করেননি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের একজন নেতা ওই কক্ষে অবস্থান করছিলেন। পরে তাঁকে নেমে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষ মীমাংসা করে দিয়েছেন।’

আরও পড়ুন