ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সরকারের সহায়তা চান স্বজনেরা

পদ্মায় ডুবে যাওয়া ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের স্বজনেরা। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা। মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার মাটিভাঙ্গা গ্রামেছবি: প্রথম আলও

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের (৩৯) লাশ দাফন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার মাটিরাঙ্গা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

হুমায়ুন কবির মাটিভাঙ্গা গ্রামের মৃত আবদুল লতিফের ছেলে। গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান আছে। গত বুধবার সকালে পাটুরিয়ায় ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি ‘রজনীগন্ধা’ ৯টি মালবাহী যান নিয়ে পদ্মা নদীতে ডুবে যায়। এর পর থেকে হুমায়ুন কবির নিখোঁজ ছিলেন। গতকাল সোমবার বিকেলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে তাঁর ভাসমান লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

হুমায়ুনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে মুহ্যমান হুমায়ুনের স্ত্রী রোজী আক্তার ও তিন সন্তানকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন স্বজনেরা। দুপুরে হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াছিন আরাফাত ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন। তাঁরা দুই বস্তা চাল, ফল ও শুকনো খাবার নিয়ে শোকার্ত পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে যান।

ইউএনও মো. ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘হুমায়ুন কবিরের পরিবার যেকোনো প্রয়োজনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সহযোগিতা করব। তাঁর সন্তানেরা যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে জন্য সহায়তা করা হবে। আজ আমরা পরিবারটির জন্য চাল, ফল ও শুকনো খাবার নিয়ে এসেছি। তাঁদের কিছু আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হবে।’

হুমায়ুন কবির
ছবি: সংগৃহীত

হুমায়ুনের স্ত্রী রোজী আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার আমার স্বামীর বাড়িতে আসার কথা ছিল। মঙ্গলবার রাতে ফোনে পাঞ্জাবিটা ধুয়ে রাখতে বলেছিলেন। ছেলেকে নিয়ে জুমার নামাজ পড়তে যেতে চেয়েছিলেন। এই কথাই শেষ কথা হবে বুঝতে পারিনি। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা ধারণা করেছিলাম, বেঁচে নেই। কারণ, বেঁচে থাকলে আমাদের ফোন করতেন। আমাদের বাড়ির কাজ এখনো শেষ হয়নি। তিনটি ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে। স্বামীর আয়েই সংসার চলত। তাঁর মৃত্যুর পর কীভাবে সংসার চলবে, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা কীভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’

হুমায়ুনের বড় মেয়ে কামরুন্নাহার (১৬) বলে, ‘আমরা বাবার লাশ পেয়েছি, তাতেই খুশি। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ, তিনি যেন আমাদের তিন ভাইবোনের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেন।’

আরও পড়ুন

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআইডব্লিউটিএ) যোগ দেন হুমায়ুন কবির। তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে কামরুন্নাহার একাদশ শ্রেণিতে, মেজ মেয়ে নূর–ই–জান্নাত দশম শ্রেণিতে ও একমাত্র ছেলে ইয়াসিন আরাফাত পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আজ ভোর পাঁচটায় হুমায়ুন কবিরের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টায় পূর্ব মাটিভাঙ্গা মোনতাজিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে মা–বাবার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন

পূর্ব মাটিভাঙ্গা সাবাতুন নেছা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আলী হোসেন বলেন, হুমায়ুন এলাকায় সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। সাধ্যমতো মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহায়তা করতেন। হুমায়ুন তাঁদের মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ছিলেন। পহলান বাড়ি জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি দিশাহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের প্রতি পরিবারটিকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান আলী হোসেন।

মঙ্গলবার রাত ১২টার পর রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি ‘রজনীগন্ধা’। ফেরিটিতে ৯টি মালবাহী যানবাহন ছিল। রাত দেড়টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে আটকা পড়ে ফেরিটি। পরের দিন সকাল আটটার দিকে ফেরিটি ডুবে যেতে থাকে। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ২০ জনকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ ছিলেন হুমায়ুন কবির।

আরও পড়ুন