এক রাতে পাঁচ থানায় মামলা, আসামি বিএনপির ৪৩৯ নেতা-কর্মী, গ্রেপ্তার ৩০

প্রতীকী ছবি

জামালপুর সদরসহ পাঁচটি উপজেলায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে হওয়া এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে মোট ১৬৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২৭০ জনকে।

জামালপুর সদর, বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর থানায় হওয়া এসব মামলায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে হওয়া মামলাগুলোর বাদী পুলিশ। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটলেও সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে এভাবে মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। অবশ্য পুলিশ বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মধ্যে আছেন জামালপুর পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন, দিগপাইত ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ ও শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম, পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ, বিএনপির কর্মী সুমন মিয়া ও শাহবাজপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মাসুদ রানা, ইসলামপুর সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মানিক, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন, গোয়ালেরচর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোসা মিয়া, মাদারগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল মিয়া ও যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তুহীন, দেওয়ানগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. আতিকুল রহমান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মো. মঞ্জুরুল হক, উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. হালিম ও যুবদলের সাবেক সদস্য সেরানী প্রধান, বকশীগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন বকশী, উপজেলা পৌর বিএনপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. দেলোয়ার, পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য মো. মুছা, বাট্টাজোড় ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মাজেদ মিয়া, উপজেলা বিএনপির সদস্য হেলাল মিয়া প্রমুখ।

আরও পড়ুন

জামালপুর সদর থানায় হওয়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, পৌর শহরের ফুলবাড়ীয়া ঈদগাহ মাঠে কতিপয় দুষ্কৃতকারী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকে জমায়েত হয়। খবর পেয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ওই মাঠে পুলিশ উপস্থিত হলে দুষ্কৃতকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ১২ জনকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৭০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের একজন শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম। তাঁর সহকর্মী শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি ও রেজাউল করিম জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে শহরের ফৌজদারি মোড় এলাকায় যাচ্ছিলেন। থানার সামনে পৌঁছালে এক এসআই রেজাউল করিমকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখান। ফুলবাড়িয়ায় কোনো বৈঠক বা সভা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। মামলাটি মিথ্যা দাবি করে এই নেতা বলেন, সবাইকে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে, ঘটনাস্থল ওই এলাকা দেখিয়েছে।

এই নেতার কথার সত্যতা যাচাই করতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ফুলবাড়িয়া ঈদগাহ মাঠ এলাকায় যান এই প্রতিবেদক। আশপাশের লোকজন বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় এ মাঠে কোনো বৈঠক বা সভা হতে তাঁরা দেখেননি।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, শহরে নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ফুলবাড়িয়া ঈদগাহ মাঠে গোপন বৈঠক হচ্ছিল। এ সময় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। তাঁদের সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ থানায় ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বুধবার রাতে উপজেলার সীমারপাড়া ঈদগাহ মাঠে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইসলামপুর থানায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪০ জনকে। এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দেওয়ানগঞ্জে ৪০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৫০ জনকে। এর মধ্যে গত বুধবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মাদারগঞ্জ থানায় ২১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৬০ জনকে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জানতে চাইলে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাগুলো করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা না পাওয়া গেলে সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে দোষী পাওয়া গেলে আদালত তাঁর বিচার করবেন।

প্রতিটি উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দিগপাইত ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদকে নিজের দোকান থেকে, জামালপুর পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে, বিএনপির কর্মী সুমন মিয়াকে শহরের শফি মিয়ার বাজার এলাকায় জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পাশের ফলের দোকান থেকে, শাহবাজপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মাসুদ রানাকে শাহবাজপুর বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় সবাইকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে, ফুলবাড়িয়া ঈদগাহ মাঠ থেকে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠে বিএনপির কোনো বৈঠক ছিল না। নেতা-কর্মীদের হয়রানি এবং ভয় দেখাতেই এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন