চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওএমএসের চাল-আটা কিনতে মানুষ লাইন ধরছেন ভোর থেকে

ওএমএসের চাল-আটা নিতে আসা নারীদের লাইন। বুধবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শহরের আজাইপুর মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আজাইপুর মহল্লায় খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমএস) ডিলার আবদুল মোমিনের গুদাম। এখানে সপ্তাহে দুই দিন স্বল্প মূল্যে খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি করা হয়। আজ বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে দেখা যায়, চাল-আটা কিনতে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। এক দিনে মাত্র দুই শ লোকের জন্য এই বরাদ্দ থাকলেও লাইনে লোকসংখ্যা পাঁচ-ছয় শ ছাড়িয়ে গেছে।

লাইনে দাঁড়ানো অধিকাংশ ব্যক্তিই পরিবারের বয়স্ক বা প্রবীণ সদস্য। বেশির ভাগ মানুষের হাতে দেখা গেল টুল, পিঁড়ি বা ইট-পাথর। এসব রেখে তাঁরা লাইনে সিরিয়াল দেন।

আজাইপুর মহল্লার সুফিয়া খাতুন এসেছেন সকাল ৭টার দিকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামার আগে ভোর তিনটা-চারটা থ্যাকাই মেলাই লাইনে। হামি পাবো কহ্যা মনে হয় না। না পাইলে কাইল যেনে পাই, তাই আইজকাই লাইনে পিঁড়া থুইয়্যা যাব।’

আরও পড়ুন

পণ্য না পাওয়ার এমন শঙ্কার কথা বলেন আজাইপুর মহল্লার হোসনে আরা (৪০), সেতারা বেগম (৬০) ও আরও কয়েকজন। তাঁরা জানান, আজকের চাল-আটা দেওয়া শেষ হবে দুপুর ১২টার দিকে। তারপর লাইনে ইট-পাথর, টুল-পিঁড়ি রাখার সুযোগ পাওয়া যাবে। সে পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে।

ওএমএসের চাল-আটা নিতে আসা বয়স্ক মানুষের লাইন। বুধবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শহরের এলাকার আজাইপুর মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

পুরুষের লাইনে দেখা মেলে গোলাম রাব্বানী (৮১), মজিবুর রহমান (৮০), আফতাব উদ্দিন (৭০), আতিকুর রহমানসহ (৭২) আরও অনেক বয়োবৃদ্ধ মানুষকে। তাঁরা জানান, ফজরের নামাজ পড়ার পরপরই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন।

চাল-আটা বিক্রির কাজে নিয়োজিত এক নারী কর্মী বলেন, ‘এখানে ওএমএসের চাল-আটা কিনতে আসা গরিব লোকজনের অধিকাংশকেই খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এরপরও পাওয়াটা নিশ্চিত করার জন্য পরিবার থেকে বয়স্ক লোককে পাঠানো হয়, যেন আমরা ফিরিয়ে না দিই। আমাদেরও মায়া লাগে। এমন বয়স্ক মানুষ ফজরের নামাজের পর থেকে কষ্ট করে লাইন ধরেছেন। তাঁদের আমরা খালি হাতে ফেরত পাঠাই না।’

আরও পড়ুন

ডিলার আবদুল মোমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজাইপুর, পোল্লাডাঙ্গা, বটতলাহাট, নতুনহাট, নামোশংকরবাটী, মীরপাড়া ও আরামবাগ মহল্লার লোক আমার এখানে আসেন। ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল এবং ২৪ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি আটা কিনতে পারবেন ২০০ লোক। কিন্তু আসেন ৫০০-৬০০ জন। অনেকে না পেয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ফিরে যান। এসব মানুষকে ফিরিয়ে দিতে খুবই খারাপ লাগে।’

ওএমএসের চাল-আটা পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে আগেই টুল-পিড়ি, ইট-পাথর রেখে সিরিয়াল দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শহরের আজাইপুর মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

আবদুল মোমিন বলেন, ‘ওএমএসের জন্যও গরিব মানুষকে কার্ড করে দেওয়া হোক অথবা বরাদ্দ বাড়ানো হোক। তাহলে এমন ঘটনা দেখতে হবে না। আমরা এমন দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সাড়া পাই না।’

আরও পড়ুন

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই গুদামের সামনে আবার গিয়ে দেখা যায়, চাল-আটা বিক্রি শেষ। কিন্তু টুল-পিঁড়ি ও ইট-পাথর দিয়ে লাইন দেওয়া আছে। প্রায় ৭০টির মতো সিরিয়াল। রাস্তার পাশের বাড়ির মালিক হামিজ উদ্দিনের স্ত্রী মোসলেমা বেগম (৬০) বলেন, ‘রাত তিনটা থেকেই মেয়েরা লাইন ধরা শুরু করে। তাদের কথাবার্তায় ঘুম ভেঙে যায়। এদের মধ্যে কাউকে কাউকে বাথরুম (শৌচাগার) ব্যবহার করতে দিতে হয়। কাউকে বাড়ির মধ্যে বসতে দিই। কয়টা টাকা সাশ্রয়ের জন্য এই হাড়কাঁপানো শীতে আলো না ফুটতেই বিছানা ছেড়ে আসতে হয়। বড়ই মায়া লাগে।’ আরেকটি বাড়ির বাসিন্দা রিমা খাতুন (৪০) বলেন, ‘আমিও বয়স্কদের কষ্ট লাঘবে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসাই। একই মহল্লার মানুষ। এইটুকু না করলে খারাপ লাগবে, তাই করি।’

আরও পড়ুন