মেডিকেলে ভর্তির খরচ জোগাড় হয়নি, অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ইশার

ইশা খাতুন
ছবি: প্রথম আলো

ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ইশা খাতুনের। সংসারে অভাব থাকলেও সেই স্বপ্নপূরণে পিছপা হননি। বাবার সহায়তা আর মাঝেমধ্যে নিজে টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। সাফল্যও পেয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কিন্তু অর্থাভাবে তাঁর মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দবাদ ইউনিয়নের খিদির গ্রামের ইনাম আলী ও শান্তি বেগম দম্পতির মেয়ে ইশা খাতুন। তিনি এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় ২ হাজার ১৯৭তম হয়ে পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

দুই বোনের মধ্যে ইশা খাতুন বড়। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক এবং সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। তাঁর ছোট বোন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ইনাম আলী সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চালান।

ইনাম আলী বলেন, ‘মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, এ জন্য আমি অনেক খুশি। তবে মেয়েকে মেডিকেলে ভর্তি করার সামর্থ্য আমার নেই। যে কারণে চরম চিন্তার মধ্যে আছি।’ ইনাম আলী আরও বলেন, ‘অটোরিকশা চালিয়ে প্রতি মাসে যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল, তার ওপর মেয়ে দুইটার লেখাপড়ার খরচ তো রয়েছেই। ভর্তির টাকার জন্য আত্মীয়স্বজনের কাছে ধার চাচ্ছি। তবে এখনো পাইনি। এ ছাড়া এত টাকা আমি কোথায় পাব?’

আক্ষেপ করে ইনাম আলী বলেন, ‘মেডিকেল কলেজে মেয়েকে পড়ানোর ইচ্ছা, স্বপ্ন থাকলেও তা আমার সাধ্যের বাইরে। আমার মেয়েকে মেডিকেল কলেজে পড়াতে এত খরচ কোথায় পাব? বিষয়টি নিয়ে চরম চিন্তার মধ্যে আছি। তবে এখনো হাল ছাড়িনি।’

আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও ভর্তি ও আনুষঙ্গিক খরচের টাকা এখনো সংগ্রহ না হওয়ায় অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ইশার। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার চরম ইচ্ছা, একদিন চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষকে সেবা করব। মা-বাবার কষ্ট দূর করব। পরিবারের অর্থাভাব দূর করব। কিন্তু আদৌ জানি না, আমার সে আশা পূরণ হবে কি না? তবে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ইশা খাতুনের মা শান্তি বেগম বলেন, বর্তমানে খুব অভাবের মধ্য দিয়ে তাঁদের সংসার চলে। মেয়েকে কীভাবে মেডিকেলে ভর্তি করাবেন, পড়ালেখার খরচ জোগাবেন, বুঝতে পারছেন না। তবে এ পরস্থিতিতে কারও কাছে সহায়তা চাইতেও লজ্জা বোধ করছেন।

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ টি এম সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ইশা খাতুন অনেক মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। সে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর মতো মেধাবী শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা বড় প্রয়োজন।