কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপের হাতছানিতে তেঁতুলিয়ায় ভ্রমণপিপাসুরা

আকাশ পরিষ্কার থাকায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। গতকাল শুক্রবার সকালে মহানন্দা নদীর ডাকবাংলো এলাকা থেকেছবি: সোয়েল রানা

বিকেল সাড়ে ৪টা। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো-সংলগ্ন মহানন্দা নদীর পাড়ে বসে মুঠোফোনে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলছেন দিনাজপুরের তরুণী হাবিবা আক্তার ও মারুফা আক্তার। এর আগে আরও দুদিন এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। এবার দেশের মাটিতে বসে হিমালয়ের পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ দৃশ্য দেখে আর ছবি তুলতে পেরে অভিভূত তাঁরা।

শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে হাবিবা আক্তারদের মতো এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা ভিড় করছেন দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মহানন্দার পাড় থেকে উপভোগ করছেন অপরূপ দৃশ্য। কেউ কেউ একনজর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে রাত্রিযাপনও করেছেন তেঁতুলিয়ায়।

আরও পড়ুন

এবার আবহাওয়ার কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘার লুকোচুরি খেলায় পর্যটকেরা এসে মাঝেমধ্যে দেখতে না পেয়ে নিরাশ হয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধের কারণেও তুলনামূলকভাবে পর্যটকের সংখ্যা ছিল কম। তবে গত বুধবার থেকে হঠাৎ উত্তরের আকাশ পরিষ্কার হওয়ায় গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেখা মিলেছে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় বাড়তে শুরু করেছে পর্যটকের সংখ্যা।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক ডাকবাংলো এলাকা থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার এমন দৃশ্য। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

গত বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড় শহর থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথে অনেককেই গাড়ি থামিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার মুঠোফোনে ভিডিও কল করে বাড়িতে থাকা স্বজনদের দেখানোর চেষ্টা করছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছেন তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক ডাকবাংলোতে মহানন্দা নদীর তীরে। এই নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালে সবচেয়ে ভালো করে দেখা যায় সূর্যের বর্ণিল আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত কাঞ্চনজঙ্ঘা। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে নানান রং বদলানো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডাকবাংলো এলাকায় বসছে প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডা।

আরও পড়ুন

সূর্যোদয়ের সময় তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো-সংলগ্ন মহানন্দার পাড়ে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই মনে হয় যেন কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা বরফ কাঁচা সোনার রং ধারণ করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে আবার সেই কাঁচা সোনার রং শ্বেতশুভ্র হয়ে ওঠে। বিকেলে আবার পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের সোনালি আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘা মেতে ওঠে রংবদলের খেলায়।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করেন তেঁতুলিয়া উপজেলায়। গতকাল সকালে তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হেমন্তের সময়টাতে আকাশ পরিষ্কার থাকলেই পঞ্চগড় জেলা শহরসহ তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ দৃশ্য দেখা যায়। এবার শরতের শেষের দিকে স্বল্প সময়ের জন্য উত্তরের আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি দিলেও তেমন একটা স্থায়ী হয়নি। তবে হেমন্ত শুরুর পরও মাঝেমধ্যে লুকোচুরি খেলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। গত চার দিনে দিনভর সূর্যের আলোর তারতম্যে রং বদলাচ্ছে। প্রতিবছরই অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নভেম্বরের প্রায় শেষ পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও এবার মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখা দিয়েছে কিছুটা দেরিতে।

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সীমান্ত থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেখান থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব প্রায় ৭৭ কিলোমিটার। দার্জিলিংয়ের টাইগার হিলে দাঁড়িয়ে সুদূর উত্তর-পশ্চিম দিকে তাকিয়ে পর্যটকেরা যে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করতেন, তা এখন পঞ্চগড়ের মাটিতে বসেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

পরিবারের সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছেন আহনাফ তাজওয়ার নামের এক তরুণ। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন লেন্সসহ ক্যামেরা। আহনাফ তাজওয়ার বলেন, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতেই আমরা রংপর থেকে এসেছি। এত দিন শুধু শুনেছি, এবার এখানে এসে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। ছবিও তুলেছি অনেক।’

আকাশ পরিষ্কার থাকলে দিনের একেক সময় একেক রূপে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা
ছবি: প্রথম আলো

হাবিবা আক্তার বলেন, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এর আগে দুদিন এসেছি। কিন্তু দেখতে না পেয়ে ফিরে গিয়েছি। এবার নিজের চোখে দেশের মাটিতে বসে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। অবশেষে আমরা সাকসেস (সফল) হলাম।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড়ে আসা পর্যটকেরা যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন বা বিপদে না পড়েন সে জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন পর্যটকদের সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের কারণে স্থানীয় লোকজনও আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন।

আরও পড়ুন