‘আয় নেই’ হাবিবুরের, শফির বার্ষিক আয় ৮০ লাখ টাকা

শফি আহমদ চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমানের বার্ষিক কোনো আয় নেই। যদিও তিনি পেশায় একজন আবাসন ব্যবসায়ী। পেশায় কৃষক বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া কৃষি খাত থেকে বার্ষিক ২ লাখ ২৫ হাজার ও দোকান ভাড়া থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমানের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় হয় ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার্ষিক আয় করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ। বিএনপির এই সাবেক সাংসদের বছরে আয় ৮০ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকা।

নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে। উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহা. ইসরাইল হোসেন হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া এসব তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করোনায় সংক্রমিত হয়ে গত ১১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এই আসনে আগামী ২৮ জুলাই ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৪ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৫ জুন। ১৭ জুন যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করা হয়।

প্রবাসী পল্লী গ্রুপ নামের একটি আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ডিএমডি) দায়িত্বে থাকার পরও বার্ষিক আয় না থাকার বিষয়ে জানতে রোববার বিকেলে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে প্রথম আলো। প্রশ্ন শুনে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটা বোধ হয় আমার ভুল হয়ে গেছে।’ তাহলে তাঁর আয় কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে এটা বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহা. ইসরাইল হোসেন বলেন, তাঁর আয় আছে কী নেই, বিষয়টি তাঁদের পর্যবেক্ষণের বিষয় নয়। তাঁর আয়ের তথ্য গোপন করা নিয়ে কেউ যদি অভিযোগ করেন, তাহলে তাঁরা যাচাই–বাছাই করে দেখবেন।

আয়ের ঘর শূন্য হাবিবুরের

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। হলফনামায় বার্ষিক আয়ের অংশে এই প্রার্থীর কোনো তথ্য দেওয়া নেই। তবে কৃষি খাত থেকে তাঁর স্ত্রীর বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৫০ টাকা আয় হয়।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে হাবিবুরের নামে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৫ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩০ টাকা রয়েছে। নিজ নামে ৫২ হাজার ২৪৪ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৯ হাজার ৪৪৮ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে। নিজের নামে রয়েছে ৩ হাজার ৫০০ শেয়ার, যার মূল্য ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজ নামে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৮ টাকার অকৃষিজমি রয়েছে। নিজের নামে ঢাকার পূর্বাচলে ৭ কাঠার প্লট রয়েছে। হলফনামায় যার মূল্য ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে। যৌথ মালিকানায় হাবিবুরের ব্যাংকঋণ রয়েছে। পূর্বাচল প্রবাসী পল্লী লিমিটেডের নামে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

ব্যবসায়ী শফির আয় সবচেয়ে বেশি

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য (বহিষ্কৃত) শফি আহমদ চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। পেশায় ইনডেন্টিং ব্যবসায়ী (রপ্তানি ব্যবসা) শফি আহমদ চৌধুরী অ্যালবার্ট ডেভিট প্রাইভেট লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর বার্ষিক আয় ৮০ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকা। নিজ নামে ও জমা মিলিয়ে ব্যাংকে রয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৫১২ টাকা। বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর নিজ নামে শেয়ার রয়েছে। রাজধানী ঢাকার গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর রোডে নিজ নামে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। ৪৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৪৭ টাকা মূল্যের একটি নতুন (রেইন রোভার জিপ) গাড়ি ও ২ লাখ টাকা মূল্যের একটি পুরোনো গাড়ি রয়েছে।

আরও পড়ুন

স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে তিনি মোট ৪৯ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার ৩৯৪ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক। তাঁর ৭ কোটি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭১ টাকা ঋণ রয়েছে।

সম্পদশালী জাপার আতিকুর

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আতিকুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি পাস। ব্যবসায়ী আতিকুর প্রিন্স গ্রুপ অব কোম্পানি নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। প্রিন্স রিয়েল এস্টেট (প্রা.) লি., প্রিন্স মেডিকেল সেন্টার ও সিলেট সিটি মেডিকেল সেন্টার নামের তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। ব্যবসা থেকে বার্ষিক ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও নির্ভরশীলরা ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আয় করেন।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে ২২ লাখ ৮ হাজার ৪৯৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে। নিজের নামে ২০ লাখ ৭০ হাজার ১৬৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে।

তিনি নিজের নামে ১০ লাখ টাকার জিপ গাড়ি, কোম্পানির নামে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের প্রাডো গাড়ি ব্যবহার করেন। আতিকুরের স্থাবর সম্পদ রয়েছে, নিজের নামে দক্ষিণ সুরমার হরগৌরী মৌজায় ১৫ শতক জমি, হবিগঞ্জের লাখাইয়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ধানি জমি। স্ত্রীর নামে ঢাকার সাতারকুল মৌজায় (নিকুঞ্জ) ১০ কাঠা জমি, যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন।

এ ছাড়া নিজের, স্ত্রীর ও ছেলের নামে এবং যৌথ মালিকানায় ঢাকার নিকুঞ্জ–২, রামপুরা উলন মৌজা, বারিধারা নর্থ, বারিধারা পার্ক রোড, গুলশান, বনানী, ঢাকার কালাচাঁদপুরে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানসহ আতিকুরের নিজের নামে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে।

‘স্বশিক্ষিত’ জুনায়েদ

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া শিক্ষাগত যোগ্যতায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি কৃষি খাত থেকে বার্ষিক ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও দোকানভাড়া থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। নিজের নামে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা, ৬০ হাজার টাকার ১ ভরি স্বর্ণ, ১০ হাজার টাকার মুঠোফোন, ৬০ হাজার টাকার আসবাব ও অস্থাবর সম্পদ তাঁর। স্থাবর সম্পদ রয়েছে নিজের নামে ১০ দশমিক ১৪৫ একর কৃষিজমি, ৩ লাখ টাকার ১ শতক জমি, পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ৮ কক্ষের বসতঘর ও স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ৬৯ একর কৃষিজমি। তাঁর কোনো ব্যাংকঋণ নেই।

আরও পড়ুন