পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিলের পর তিনি বাধা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে সার্টিফায়েড কপি তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সার্টিফায়েড কপি তুলতে না পারায় ওই প্রার্থী প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য আপিলও করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। আপিলের সময়সীমা ছিল আজ সোমবার পর্যন্ত।
হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবার বিকেলে মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাইয়ের আগে আমার মনোনয়নপত্রের সমর্থক এনায়েত সিকদারকে তুলে নেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এরপর সমর্থনকারীর স্বাক্ষরে গরমিল থাকার অভিযোগে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এরপর আমি যাতে মনোনয়নপত্র বাতিলের সার্টিফায়েড কপি তুলে আপিল করতে না পারি, সে জন্য উপজেলা পরিষদ এলাকায় পাহারা বসান আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কবির হোসেন বয়াতী। গত শনিবার ও গতকাল রোববার আমার পক্ষে আমার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কার্যালয়ে গিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাননি। এ সময় সেখানে কর্মরত অফিসের অন্য কর্মচারীরা জানান, প্রার্থীকে নিজে এসে সার্টিফায়েড কপি তুলতে হবে। আজ আপিলের শেষ সময় হওয়ায় আমি সার্টিফায়েড কপি তুলতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত আবেদন করি। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছি।’
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাকে সার্টিফায়েড কপি না দেওয়ার জন্য টালবাহানা করেছেন।’
তবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কবির হোসেন বয়াতী বলেন, হাবিবুর রহমানের সার্টিফায়েড কপি তুলতে কেউ বাধা দেয়নি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাকে সার্টিফায়েড কপি না দেওয়ার জন্য টালবাহানা করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা এ এস এম রোকনুজ্জামানের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ধরেননি। তাঁকে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। তবে পিরোজপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান খলিফা বলেন, প্রার্থীর ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সার্টিফায়েড কপি তুলতে পারবেন।
এর আগে ৯ মার্চ দুপুরে হাবিবুর রহমান মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য ট্রেজারি চালান ফরম নিয়ে উপজেলা পরিষদে গেলে চালান ফরম ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গত শুক্রবার বিকেলে হাবিবুর রহমান মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাইয়ের জন্য উপজেলা পরিষদে গেলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন হাবিবুর রহমানের সমর্থক এনায়েত সিকদারকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। ওই দিন বিকেলে মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাইয়ের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কবির হোসেন বয়াতী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন, হাবিবুর রহমানের মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ও সমর্থকের স্বাক্ষরে গরমিল রয়েছে। এরপর প্রস্তাবকের স্বাক্ষর সঠিক হলেও সমর্থক এনায়েত সিকদারকে না পাওয়ায় তাঁর পরিচয়পত্রের স্বাক্ষরের সঙ্গে মনোনয়নপত্রের স্বাক্ষরের গরমিল পাওয়ায় হাবিবুরের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
আমাকে তুলে নেওয়ায় মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাইকালে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমার পরিচয়পত্রের স্বাক্ষর ও মনোনয়নপত্রে সমর্থকের স্বাক্ষরের মধ্যে খুব একটা গরমিল ছিল না। কয়েক বছর আগে পরিচয়পত্রে দেওয়া স্বাক্ষরের সঙ্গে একটু হেরফের হতেই পারে।
এনায়েত সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে তুলে নেওয়ায় মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাইকালে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমার পরিচয়পত্রের স্বাক্ষর ও মনোনয়নপত্রে সমর্থকের স্বাক্ষরের মধ্যে খুব একটা গরমিল ছিল না। কয়েক বছর আগে পরিচয়পত্রে দেওয়া স্বাক্ষরের সঙ্গে একটু হেরফের হতেই পারে।’
আগামী ১১ এপ্রিল উপজেলার বালিপাড়া ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের কবির হোসেন বয়াতী, জাতীয় পার্টির (জেপি) মোয়াজ্জেম হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রুহুল আমিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান, আবু হানিফ ও মো. খলিল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই–বাছাইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।