ইফতারি ও উপহারের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা, শাশুড়ি গ্রেপ্তার

নির্যাতন
প্রতীকী ছবি

সিলেটের ওসমানীনগরে ইফতারি কম দেওয়ায় গৃহবধূকে বেঁধে নির্যাতন ও তাঁর বাবাকে ডেকে নিয়ে মারধর করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গৃহবধূ জায়েদা বেগম (২১) বাদী হয়ে স্বামী মামুন মিয়া (২৫), শ্বশুর আমির আলী (৬০) ও শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমের (৪৮) নামে মামলা করেছেন। মামলায় গৃহবধূর শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল রোববার দুপুরে সিলেটের ওসমানীনগরের উমরপুর ভরাউট গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গতকাল শনিবার দুপুরে একই উপজেলার উসমানপুর তাহিরপুর গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় মামলার পর স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ও তাঁর বাবার ভাষ্য, প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে জায়েদা বেগম ও মামুন মিয়ার বিয়ে হয়। তাঁদের ৯ মাস বয়সী ছেলে আছে। বিয়ের পর থেকে জায়েদাকে বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দেওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে আসছেন। এই রোজার সময় জায়েদার বাবার বাড়ি থেকে ইফতার দিতে দেরি হওয়া ও কম দেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ দেখান শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ঈদের উপহার কেনার জন্য ২০ হাজার টাকা এনে দিতে জায়েদাকে নির্যাতন করেন তাঁরা। গতকাল সকালে বাবার বাড়ি থেকে ঈদের উপহার কেনার টাকা এনে না দেওয়ায় নির্যাতনের শিকার হন জায়েদা। তিনি তাঁর বাবা ও ভাইদের টাকা নিয়ে আসার জন্য কল করেন। বাবা আবদুস শহীদ মেয়ের বাড়িতে গেলে মারধরের শিকার হন। পরে তিনি সিলেটের ওসমানীনগর থানায় গিয়ে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে মেয়েকে উদ্ধারে সহযোগিতা চান।

পরে পুলিশ জায়েদা বেগম ও তাঁর শিশুসন্তানকে উদ্ধার করে আবদুস শহীদের কাছে দেয়। এ ঘটনায় গতকাল রাত ৯টার দিকে গৃহবধূ জায়েদা বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে সেটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়।

জায়েদা বেগমের বাবা আবদুস শহীদের ভাষ্য, ‘টাকার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রায়ই মেয়েকে নির্যাতন করত। আমাদের অবস্থা ভালো না। টাকা দিতে পারি না। গতকালও ঈদের কাপড় কেনার জন্য ২০ হাজার টাকা দিতে মেয়েকে মারধর করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমি তাঁদের বাড়িতে গেলে মেয়েকে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাই। এ সময় আমি এর প্রতিবাদ জানালে আমাকেও মারধর করা হয়। প্রতিবেশীরা আমাকে উদ্ধার করেন।’

নির্যাতনের শিকার জায়েদা বেগম বলেন, ‘ইফতারি কম হওয়ায় স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। তাঁরা মারধর করেন। ইফতারির সঙ্গে কেন ঈদের উপহার দেওয়া হলো না, এ নিয়েও কথা শোনান। ঈদের কাপড় কিনতে ২০ হাজার টাকার জন্য আমাকে নির্যাতন করেন।’

আরও পড়ুন

সিলেটের ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, গত শনিবার দুপুরেও একই ধরনের ঘটনায় এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। এর এক দিন পর অন্য এক গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ আসে। গতকালের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। এ ঘটনায় করা মামলায় গৃহবধূর শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গৃহবধূর স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তারের তৎপরতা চলছে।