‘এই মচা পাইয়া কী বাঁচনটাই না বাঁচলাম’

ত্রাণের প্যাকেটের ভেতর কী আছে আন্দাজ করতে পেরে মুখে হাসি ফোটে ছায়ারুনের (বাঁয়ে)। আজ বৃহস্পতিবার সিলেট সদর উপজেলার শাহজালাল লতিফিয়া আইডিয়াল একাডেমি প্রাঙ্গণে
ছবি: সুমনকুমার দাশ

ডান চোখ জন্মান্ধ, বাঁ চোখে দেখেন কম। বয়স পেরিয়েছে ষাটের কোঠা। শরীরও নেতিয়ে পড়েছে। বহু বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন, নেই কোনো সন্তানও। এক সপ্তাহ আগে বন্যার পানি যখন হু হু করে ঘরে ঢুকতে শুরু করে, তখন কোনোরকমে পাড়া-প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঘর থেকে বেরিয়েছেন ছায়ারুন। কোমরসমান পানি ঢুকে তাঁর বাঁশ-মাটির ঘরটিও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। ভুগতে থাকেন তীব্র খাবারের সংকটে।

ছায়ারুনের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার লামারগাঁও গ্রামে। আজ বৃহস্পতিবার ছায়ারুনের হাতে একটা ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। তখন বারবার হাত দিয়ে প্যাকেটটি তুলে ওজন বোঝার চেষ্টা করছিলেন তিনি। ভেতরে কী আছে, সেটা আন্দাজ করতে পেরে তাঁর মুখে হাসি ফোটে। আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আন্ধা মানুষ আমি। মানুষজনের সয়-সাহায্য নিয়া এমনিতেই চলি। পানি ভাসাইয়া নিয়ে গেছে আমার সব। এই মচা (ত্রাণের প্যাকেট) পাইয়া কী বাঁচনটাই না বাঁচলাম!’

প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ছায়ারুনের মতো ২০০ জনের হাতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আজ বেলা দেড়টায় সিলেট সদর উপজেলার শাহজালাল লতিফিয়া আইডিয়াল একাডেমি প্রাঙ্গণে ত্রাণ নিতে জড়ো হয়েছিলেন লামারগাঁও, সোনাতলাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বন্যার্ত মানুষেরা। প্রত্যেকের হাতে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও আইডিএলসির ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। প্রতিটি প্যাকেটে ছিল ৫ কেজি চাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি আটা, ১ কেজি লবণ, ১০০ গ্রাম গুঁড়া মরিচ ও ১০০ গ্রাম গুঁড়া হলুদ। ত্রাণ পেয়ে সবার চোখে–মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা যায়। খুশি মনে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।

ফেরার পথে লামারগাঁও গ্রামের আনা মিয়া (৬০), আবদুল মছব্বির (৬৫) এবং সোনাতলা গ্রামের সুমি বেগম (২৫), সুফিয়া বেগম (৩০), সালমা বেগম (২৫) বলেন, বন্যার পানিতে তাঁরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হাঁটু থেকে গলাসমান পর্যন্ত পানি তাঁদের বাড়িতে হয়েছে। সংকটের এ সময়ে ত্রাণ পেয়ে তাঁরা খুবই খুশি।

প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ২০০ জনের হাতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

ত্রাণসামগ্রী বিতরণের আগে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী আজিজুর রহমান বন্যাদুর্গত ব্যক্তিদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য প্রথম আলো ও আইডিএলসিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এবারের বন্যা মানুষজনকে বিপর্যস্ত করেছে বেশি। মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রথম আলো ও আইডিএলসি যেভাবে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটি খুবই প্রশংসনীয় একটা বিষয়। এ ছাড়া প্রথম আলো তার জন্মলগ্ন থেকেই সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে প্রথম আলো সিলেট কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ, স্থানীয় সমাজকর্মী সিদ্দিকুর রহমান ও সামাদ আহমেদ, ব্যবসায়ী মাসুক মিয়া, শিক্ষার্থী আরিফ উদ্দিন, মো. ছদর উদ্দিন, মো. আল-আমিন ও বদর উদ্দিন হেলাল এবং প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অন্তর শ্যাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মিহরাব আহমেদ চৌধুরী, সদস্য ইয়াহিয়া হোসেন, ফাবলিয়া শাহা, তমা সূত্রধর, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফারহানা হক, ইমন আহমেদ, আবদুল মোহাইমিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

ত্রাণ বিতরণ শেষ হলেও সত্তরোর্ধ শহরবিবি যেতে পারছিলেন না। তিনি প্যাকেটটি মেঝেতে রেখে তাতে হাত দিয়ে আগলে রেখে বসে আছেন। পরে স্থানীয় এক তরুণ তাঁর প্যাকেটটি হাতে করে ওই নারীকে বাড়ি পৌঁছাতে সহায়তা করেন। লামারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা স্বামীহীন শহরবিবি জানান, তাঁর ৬ মেয়ে ও ৩ ছেলে। বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। এক মেয়ে সেলাই করে সংসার চালান। বন্যার পানিতে তাঁরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অবস্থা এমন যে খেয়ে না-খেয়ে আছেন। এই প্রথম তিনি কোনো ধরনের ত্রাণ পেলেন।

বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন

বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপের ডোনেশনের মাধ্যমেও আপনার সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।

আরও পড়ুন