এবার কাউসারের পক্ষে ভোট চাইলেন জেলা আ.লীগের সভাপতি

চরভদ্রাসন পাইলট স্কুল মাঠে কাউসারের পক্ষে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় অতিথিরা।
প্রথম আলো

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে এবার মো. কাউসারের পক্ষে ভোট চাইলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চরভদ্রাসন পাইলট স্কুল মাঠে কাউসারের পক্ষে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি হয়ে তিনি কাউসারকে নির্বাচিত করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। গত সপ্তাহেই কাউসারকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

আগামী শনিবার চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. কাউসার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। ফরিদপুর আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্ত রাজনীতির মাঠে কাউসার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যার অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে কাউসারের প্রার্থিতা ঘোষণা দেন খোদ কাজী জাফরউল্যাই।

ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর দলীয় পাল্টা শিবির হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন নিজের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আলী মোল্লার নাম ঘোষণা করেন।

বলা বাহুল্য, ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি জাফরউল্যা-নিক্সন শিবিরে দ্বিধাবিভক্ত। কাজী জাফরউল্যা আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক অংশটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকটি বরাবরই তাঁর শিবিরে থাকে। নিক্সন চৌধুরী দল থেকে সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর দুবার জাফরউল্যাকেই পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর থেকেই ফরিদপুর আওয়ামী লীগে নিক্সন চৌধুরী অনুসারীদের শক্তি বাড়তে থাকে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মো. কাউসারকে চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়।
চরভদ্রাসন উপনির্বাচনের সমীকরণ পাল্টে যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর কাউসার তাঁর সমর্থকদের নিয়ে সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর ব্রাহ্মণপাড়ার বাসভবনে হাজির হন। ওই দিন বিকেলে সেখানে তৈরি মঞ্চে দুই ভরি ওজনের একটি সোনার নৌকা সাংসদের হাতে তুলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিক্সন শিবিরে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগের দিন দুপুরেই নিক্সন-সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার আলী মোল্লাও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাউসারকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন

এর পরপরই চরভদ্রাসন আওয়ামী লীগ সভা করে কাউসারকে দলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পরে ১ অক্টোবর জেলা কমিটির সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন কাউসারকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ কেন্দ্রের কাছে পাঠান। এখানে বলা বাহুল্য, সবই কাজী জাফরউল্যা শিবিরের নির্দেশেই হয়েছে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুবল চন্দ্র সাহা সব ভেদাভেদ ভুলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাউসারকে নির্বাচিত করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

তবে এ অঙ্কও উল্টে যায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. কাউসারের বহিষ্কারাদেশের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের নাকচের ঘোষণায়। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার এ খবর জানার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা আজ কাউসারের পক্ষে ভোট চান।

গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ‘চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. কাউসারকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে’ এক চিঠি দেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেনকে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনাদের যৌথ স্বাক্ষরে গত ১ অক্টোবর প্রেরিত চিঠি আমরা গ্রহণ করেছি। এই চিঠিতে আসন্ন চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. কাউসারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করেন। গত ৬ অক্টোবর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ব্যতীত কাউকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা অন্য কোনো সাংগঠনিক সভার নেই। এই কারণে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক মো. কাউসারের বহিষ্কারাদেশটি বৈধ নয়। মো. কাউসারের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আনীত অভিযোগসমূহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট সত্য নয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সুতরাং আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মো. কাউসার আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবে। সভায় চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।’

গতকাল বিকেলে চরভদ্রাসন পাইলট মাঠে অনুষ্ঠিত কাউসারের নির্বাচনী সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার মোল্লা। ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুবল চন্দ্র সাহা সব ভেদাভেদ ভুলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাউসারকে নির্বাচিত করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৩ অক্টোবর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মুসার মৃত্যুর কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়ে যায়। গত ২৯ মার্চ এ উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে তা পিছিয়ে ১০ অক্টোবর ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়।