কুশিয়ারার পাড় উপচে পাঁচ শতাধিক ঘরে পানি

কুশিয়ারার পানি বাড়ায় ঘর গেছে তলিয়ে। তাই বাড়ি থেকে নৌকায় করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন মানুষজন। রোববার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনায়
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের শেরপুর এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পাড় উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে স্থানীয় আফরোজগঞ্জ বাজার এবং পাঁচটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক ঘর তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া দুই শতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল শনিবার গ্রামগুলোর দিকে পানি ঢুকতে শুরু করে।

আজ রোববার দুপুরে শেরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুশিয়ারা নদীর পাড় উপচে বিভিন্ন বাড়ি তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো ঘর অর্ধেকের বেশি ডুবে গেছে। লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। কেউ কেউ শেরপুর হামরকোনা এলাকার মৌলভীবাজার-শেরপুর সড়কে অস্থায়ীভাবে থাকার ঘর নির্মাণ করছেন।

সেখানে ঘরের জিনিসপত্র এনে স্তূপ করে রেখেছেন। কোনো কোনো বাড়ির নলকূপ অর্ধেকের বেশি পানিতে ডুবে আছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নৌকায় করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

হামরকোনা গ্রামের লকুছ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) দুপুর ১২টার দিকে ঘরে পানি ঢুকেছে। বিকেল তিনটার দিকে ঘর ছাড়ছি। ঘরের মধ্যে বুকসমান পানি। এখন রাস্তায় ঘর করলাম।’ তিনি জানান, তাঁদের প্রতিবেশী ১০টি পরিবার ঘর ছেড়ে রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছে। সড়কে আশ্রয় নেওয়া ওই গ্রামের আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা তিন ধরি বাড়িঘরছাড়া।’

প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও ঢলে কুশিয়ারা, মনুসহ জেলার নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শেরপুরের কাছে কুশিয়ারা নদীর পাড় উপচে আফরোজগঞ্জ বাজার, হামরকোনা, ব্রাহ্মণগাঁও, দাউদপুর ও নতুন বস্তি গ্রামসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক ঘরে পানি ঢুকেছে। দুই শতাধিক পরিবার স্থানীয় আজাদ বখত উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, ব্রাহ্মণগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হামরকোনা মাদ্রাসা ও মসজিদ, দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও আবার কেউ কেউ সড়কে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছে।

ঘরে পানি ওঠায় বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছেন সড়কে। সেখানেই নির্মাণ করছেন অস্থায়ী ঘর। রোববার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনায়
ছবি: প্রথম আলো

খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী আজ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল (শনিবার) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আজ (রোববার) বিকেলের দিকে ত্রাণ দেওয়া হবে। হাজারের ওপর পরিবার পানিবন্দী হয়েছে।

সব মিলিয়ে উপজেলার প্রায় ৫০০ পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে জানিয়ে মৌলভীবাজার সদরের ইউএনও সাবরীনা রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, তাদের জন্য শুকনো খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিকেলের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, জেলার সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়লেও গতকাল বিকেল পর্যন্ত তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদের পানি শহরের কাছে চাঁদনীঘাটে দুপুর ১২টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত স্থির ছিল।

শেরপুরে যে অংশে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকছে, সেখান থেকে মৌলভীবাজার-শেরপুর পাকা সড়ক পর্যন্ত প্লাবনভূমি বলে জানিয়েছেন পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখানে কোনো বাঁধ দেওয়ার সুযোগ নেই। নদী থেকে পানি ঢুকলে আটকানোরও সুযোগ নেই। এখানকার লোকজনকে অন্যত্র স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা দরকার। না হলে বছর বছর বন্যার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে তাঁদের।