কুষ্টিয়ায় জাসদ যুবনেতার লাশ নিয়ে মিছিল, হত্যার অভিযোগ আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে

কুষ্টিয়ায় জাসদ যুবনেতাকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জাতীয় যুব জোটের (জাসদ) উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান ওরফে সালামকে (৪০) গতকাল বুধবার রাতে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড। আজ বৃহস্পতিবার দাফনের আগে মাহবুবের লাশ নিয়ে মিছিল করা হয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধনে এ হত্যাকাণ্ড। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করছে।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের আমদহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল রাত ১২টা ৫০ মিনিটে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মাহবুবের মৃত্যু হয়।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত হয়। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রুমন রহমান প্রথম আলাকে, নিহতের কোমর থেকে দুই পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত অসংখ্য জায়গায় কোপানোর দাগ আছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

নিহত মাহবুব আমদহ গ্রামের এনামুল হকের ছেলে। তিনি মৌসুমি নানা কিছুর ব্যবসা করতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের জুন মাসে উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর এলাকায় কথিত তাছের পীরের দরবারে ভক্ত এক তরুণ খুন হন। ওই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন মাহবুব। এ নিয়ে মাহবুব খানের সঙ্গে তাঁর এলাকার কয়েকজনের বিরোধ ছিল। জামিনে তিনি এলাকায় ছিলেন। এরপর গত বছর ওই পীরের দরবারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব নিয়ে হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম চৌধুরীর সঙ্গে মাহবুবের বিরোধ সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, সেলিম চৌধুরী ও তাঁর লোকজন দরবার উচ্ছেদ করতে হামলা চালিয়েছিলেন। এ নিয়ে বিরোধ আরও তীব্র হয়।

গতকাল রাত ১১টার দিকে স্থানীয় আল্লারদর্গা বাজার থেকে ভ্যানে করে আমদহ গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন মাহবুব। ভ্যানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী মামুন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, মাহবুবসহ তাঁরা চারজন ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন। গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে আগে থেকে ওত পেতে থাকা ৩০ থেকে ৩৫ জন রামদা নিয়ে হামলা চালায়। তারা মাহবুবকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মারা যান।

ময়নাতদন্ত শেষে মাহবুবের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর দাফন হয়। এর আগে লাশ নিয়ে আল্লারদর্গা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী। মিছিলে থাকা শতাধিক মানুষ হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানান। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁরা আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম চৌধুরীকে দায়ী করেন।

মাহবুবের চাচাতো ভাই আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, সেলিম চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ইন্ধন ছাড়া এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে না। তাঁদের ইন্ধনেই তাঁর ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তার করলেই সব বের হয়ে আসবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের (মাহবুব) নিজেদের বিরোধে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর দায় আমার ও আমার পরিবারের ওপর চাপানো হচ্ছে। আমি এলাকাতেই আছি। সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। আমি নিজেও তদন্ত করতে পুলিশকে সহযোগিতা করব। তা ছাড়া ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা রয়েছে।’

দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দা ও জাতীয় যুবজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবীর বলেন, জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন চলবে।

আরও পড়ুন

দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া-১ আসনের সাংসদ আ ক ম সরওয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, অপরাধী যে বা যাঁরাই হোন না কেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবিদ হাসান বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে মাহবুবকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে একজনকে আটক করা হয়েছে।