গণমাধ্যমের ওপর ‘বিরক্ত’ মন্ত্রীপত্নীর আত্মীয়রা

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে আজ ব্যাখ্যা জানাতে আসেন রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগনে ইমরুল কায়েস
ছবি: প্রথম আলো

রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় ট্রেন টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বরখাস্ত হওয়ার সংবাদ প্রকাশ করায় গণমাধ্যমের প্রতি ‘বিরক্ত’ রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের আত্মীয়স্বজন। এ ঘটনায় টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগনে ইমরুল কায়েস রোববার দুপুরে এ বিরক্তি প্রকাশ করেন। বিকেলে দুজন গণমাধ্যমকর্মী তাঁদের বাড়িতে গেলে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার বিষয়ে জানতে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি টিটিই শফিকুল ইসলাম ও অভিযোগকারী ইমরুল কায়েসকে রোববার পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে তলব করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইমরুল কায়েস ঘটনার ব্যাখ্যা জানাতে সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাঁর কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে নিজেকে ‘অনিরাপদ’ দাবি করে রেলওয়ের অতি জরুরি কক্ষে গিয়ে বসেন। কক্ষটিতে সাধারণের প্রবেশে নিষেধ থাকলেও তাঁকে কিছুই বলা হয়নি।

আরও পড়ুন

তখন ইমরুল কায়েস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিভ্রান্ত হচ্ছি। আমি আমাদের দেশের মিডিয়ার প্রতি বিরক্ত। কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করেই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। পারিবারিকভাবে রেলমন্ত্রী আমার আত্মীয় হলেও সেটা কোনো ইস্যু ছিল না। তাই এ ব্যাপারে আমি আর কিছু বলতে চাই না। যা বলার তদন্ত কমিটিকেই বলব।’

বেলা দুইটার দিকে ইমরুল রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা দিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের নূর মহল্লার বাড়িতে ফেরেন। বিকেলে দুজন গণমাধ্যমকর্মী কথা বলার জন্য তাঁদের বাড়িতে যান। তাঁদের একজন বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনের ক্যামেরা পারসন জিয়াউল হক এবং অন্যজন দৈনিক মানবজমিনের ঈশ্বরদী উপজেলা প্রতিনিধি রিয়াদ হোসেন। গণমাধ্যমকর্মীদের দাবি, বাড়ির কাছে পৌঁছাতেই রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর স্বজনেরা তাঁদের গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে কয়েকজন যুবক ও এক নারী তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাঁরা দৌড়ে পালিয়ে আসেন।

আরও পড়ুন

রিয়াদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দায়িত্বপালন করতে গিয়ে এমন ঘটনা তাঁর জীবনে প্রথম। এ ঘটনায় মনে হয়েছে, সংবাদ প্রকাশের কারণে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়রা ক্ষেপে আছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণ মেনে নেওয়া কষ্টকর।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যা ঘটেছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এতে কারও খুশি বা রাগ হওয়ার কিছু নেই। তদন্ত শেষ হলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন

গত বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে বিনা টিকিটে তিন যাত্রী ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তাঁরা ট্রেনের এসি কামরায় বসে ছিলেন। তাঁদের কাছে ভাড়া চাইলে টিটিইর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ওই তিন যাত্রী নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে পরিচয় দেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম তাঁদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে এসি কামরা থেকে শোভন কামরায় পাঠান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে মুঠোফোনে টিটিই শফিকুলকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।

বরখাস্তের কারণ হিসেবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন এক যাত্রীর হাতে লেখা একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ঘটনার দিন ইমরুল কায়েস নামের এক যাত্রী অভিযোগটি দেন। ওই দিনই টিটিই শফিকুল ইসলাম বরখাস্ত হন। তবে রোববার তাঁকে আবার কাজে বহাল করা হয়েছে।