সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রধান আসামি শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীনসহ ৩০ আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের শুনানি হবে মঙ্গলবার। সুনামগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. সেলিম নেওয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, শহিদুল ইসলাম (৫০) হামলার পেছনের মূল উসকানিদাতা। দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের নাসনি গ্রামের বাসিন্দা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তিনি। শহিদুল ইসলামকে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা শহর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রোববার দিরাই থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর বিকেলে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। একই সময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আবুল বাশার শহিদুল ইসলামকে ১০ দিন এবং আগে গ্রেপ্তার হওয়া আরও ২৯ জন আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। এই রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে মঙ্গলবার।
১৭ মার্চ বুধবার সকালে ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে পাশের চার গ্রামের মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালান। এ সময় গ্রামের বাড়িঘর, মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া প্রধান আসামি শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীনসহ ৩০ আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের শুনানি হবে মঙ্গলবার।
এ ঘটনায় শাল্লা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম বাদী হয়ে করা মামলায় ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদারের করা মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করছে।
পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও হামলার শিকার গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৫ মার্চ সোমবার দিরাই উপজেলা শহরে আয়োজিত এক সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হক বক্তব্য দেন। পরে নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাস আপনের (২৮) বিরুদ্ধে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। এ নিয়ে নোয়াগাঁওয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর মানুষদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে মঙ্গলবার রাতে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীই ঝুমনকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। এর জেরে ১৭ মার্চ বুধবার সকালে আশপাশের শাল্লা উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চণ্ডিপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশের ধারাইন নদীর তীরে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে দিয়ে মানুষের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালান।