‘ঘরে খাওন নাই, ত্রাণ পাইয়া খুশি লাগতাছে’

ত্রাণ নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন বন্যাদুর্গত মানুষেরা। শনিবার দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার সফির উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

স্বামীহারা ষাটোর্ধ্ব আফতাবা বেগমের দুই ছেলেই প্রতিবন্ধী। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর একটি প্যাকেট পেয়ে তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেন। সিলেট সদরের সফির উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বন্যাদুর্গত আফতাবা বলেন, ‘ঘরে খাওন নাই, ত্রাণ পাইয়া খুশি লাগতাছে।’

আফতাবা সিলেট সদর উপজেলার পশ্চিম দর্শা গ্রামের বাসিন্দা। কিছুদিন আগেও তাঁর ঘরে বন্যার হাঁটুসমান পানি ছিল। এখন পানি নেমে গেলেও ক্ষতির চিহ্ন দৃশ্যমান। তাঁর ঘরের বাঁশের বেড়া পানির তোড়ে দুমচেমুচড়ে গেছে। ফুটো হয়ে গেছে টিনের চাল। সামান্য বৃষ্টি হলেই ফুটো চাল দিয়ে পানি পড়ে। বন্যার পানিতে দেবে গেছে ঘরের মাটিও। তিনি বলেন, ‘ঘর ঠিক (মেরামত) করার ট্যাকা নাই, খাওন নাই। খুব কষ্টে আছি।’

আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে আফতাবার মতো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট সদর উপজেলার ৬৮ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণের প্রতি প্যাকেটে ছিল ১০ কেজি চাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি ছোলা, ১ কেজি লবণ, ১০০ গ্রাম গুঁড়া মরিচ ও ১০০ গ্রাম গুঁড়া হলুদ। ত্রাণ পেয়ে সবাই খুশি মনে বাড়ি ফেরেন।

বন্যার্তদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দিচ্ছেন অতিথিরা। শনিবার দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার সফির উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে সফির উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ ও সিলেটের নাট্যসংগঠক হুমায়ুন কবীর জুয়েল বক্তব্য দেন। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো সিলেট কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ। বক্তব্যে অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য প্রথম আলো ও আইডিএলসিকে ধন্যবাদ জানান।

হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘প্রথম আলো কেবল সংবাদ প্রচার করে না, সম্ভাবনার বার্তাও পৌঁছে দেয়। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই সামাজিক সংকটের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আইডিএলসির সহযোগিতায় তাদের ত্রাণকার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দুর্গতদের এ বার্তা দেওয়া, যে লড়াই বন্যাদুর্গতরা করছেন, তার পাশে আমরাও আছি। বিশ্বজুড়ে প্রথম আলোর পাঠকসহ বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষ তাঁদের পাশে আছে। দুর্যোগ-সংকটে লড়াই অব্যাহত থাকুক।’

ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে অন্যান্যদের মধ্যে স্থানীয় মুরব্বি আছাব উদ্দিন ও শাহজাহান বুলবুল, প্রকাশক রাজীব চৌধুরী, প্রভাষক আফজল হোসেন, শিক্ষক সন্তোষ কুমার সরকার, শিল্পী হায়দার রুবেল, প্রথম আলো সিলেট কার্যালয়ের আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদ, প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সভাপতি হুমাইরা জাকিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মিহরাব আহমদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ত্রাণ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জাঙ্গাইল গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব মকবুল হক বলেন, তিনি বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছেন। পরিবারে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী এক সন্তান আছে। এর ফলে সংসার চালাতে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। এ ত্রাণ পাওয়ায় আগামী কয়েক দিনের জন্য তাঁর পরিবারের খাবারের চিন্তা দূর হয়েছে।

আরও পড়ুন

গোবিন্দপুর গ্রামের শিবলী বেগমের (৪০) স্বামী ছয় মাস আগে এক অসুখে পড়ে মারা যান। দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। গেল বন্যায় তাঁর বাড়িও বন্যাকবলিত হয়েছিল। ত্রাণ পেয়ে তিনিও অন্যদের মতো আত্মহারা হন।

বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।