‘চিড়া-গুড়, পানি খ্যায়া জীবনডা বাঁচাবার পারমো’

ফারাজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বগুড়ায় দেড় শতাধিক বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। শনিবার সারিয়াকান্দি উপজেলার দীঘাপাড়া চরে
ছবি: প্রথম আলো

উত্তাল যমুনা নদীর দুর্গম পথ। দুপুর নাগাদ ত্রাণবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা পৌঁছাল বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার দীঘাপাড়া চরে। নদীতীরে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ বানভাসি মানুষ। ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা বানভাসি মানুষের হাতে তুলে দেন ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট।

ত্রাণ পেয়ে দীঘাপাড়া চরের বানভাসি জাহানারা বেগম বলেন, ‘বানের পানিত ভাসতে ভাসতে জীবনডা শ্যাষ। খায়্যা না খ্যায়া জীবন যাচ্চে। কেউ অ্যাকনা ইলিপ দিচ্চে না। চিড়া-গুড়ডা পায়্যা খুব ভালো হলো। চিড়া-গুড়, পানি খ্যায়া জীবনডা বাঁচাবার পারমো।’ আজ শনিবার ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী পেয়ে এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন দীঘাপাড়া চরে আশ্রয় নেওয়া জাহানারা বেগম।

আরও পড়ুন

শুধু জাহানারা নন, দীঘাপাড়া চরের বানভাসি ১৫০টি পরিবারের হাতে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা নৌকায় ঘুরে ঘুরে দীঘাপাড়া ও বেণীপুর চরের বানভাসি মানুষের হাতে ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট তুলে দেন। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল দুই কেজি চিড়া, এক কেজি মুড়ি, আধা কেজি গুড়, দেড় লিটার বিশুদ্ধ পানির বোতল, এক প্যাকেট বিস্কুট, দশটি খাওয়ার স্যালাইন, দুটি মোমবাতি ও একটি দেশলাই।

দীঘাপাড়া চরের বানভাসি মানুষ জানায়, তারা কাজলা ইউনিয়নের যমুনা নদীর দুর্গম বেণীপুর চরের বাসিন্দা। বেণীপুর চর যমুনার গর্ভে বিলীন হওয়ার পর তারা ঠাঁই নিয়েছে পার্শ্ববর্তী হাটশেরপুর ইউনিয়নের দীঘিপাড়া চরে। বর্ষা এলেই চর প্লাবিত হয়। পানি নেমে গেলে শুরু হয় ভাঙন। এবার যমুনার ঢলে প্লাবিত হয় চরের কয়েক শ পরিবার। অনেকেই বসতঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। আট দিন ধরে পানিবন্দী থাকার পর যমুনায় পানি কমতে শুরু করে। এখন পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ কমেনি। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙছে নদীর কূল। বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও, সেভাবে কোনো ত্রাণ তৎপরতা নেই।

বানভাসি ১৫০টি পরিবারের হাতে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। শনিবার সারিয়াকান্দি উপজেলার দীঘাপাড়া চরে
ছবি: প্রথম আলো

দীঘাপাড়া চরের খালেদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আট দিন থ্যাকে পানিবন্দী। ঘরত হাঁটুপানি। রান্ধনের উপায় নাই। ঘরত অ্যাকনা শুকনা খাবার নাই। অ্যাকনা ইলিপও পানুনা। চিড়া-গুড়ডা খ্যায়া পরানডা ভরে দোয়া করমু।’

মুক্তি রানী নামের চরের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘বেণীপুর চরত ভালো অ্যানা ঘর, গোয়ালভরা গরু, খ্যাতভরা ফসল আঁচলো। এক রাতে সব শ্যাষ। এখন সব হারায়ে নিঃস্ব হয়্যা এই চরত আসে উঠচি। বানত খুব কষ্ট করনু। ইলিপডা পায়্যা খুব খুশি হনু।’

আরও পড়ুন

ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা বগুড়া থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে প্রথমে সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা ঘাটে আসেন। এরপর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দীঘাপাড়া চরে যান।

ত্রাণ বিতরণকালে ওষুধ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফের বগুড়া অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী বিক্রয় ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান, ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (টিডিসিএল) ব্র্যাঞ্চ ইনচার্জ মো. মতিয়ার রহমান, ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মো. ওয়াহিদুজ্জামান, সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।