চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আটজনের মনোনয়নপত্র জমা

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল আজ মঙ্গলবার। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে চমক সৃষ্টিকারী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম দুজনই আজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দুজনই জনপ্রিয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে দলীয় দ্বিধাবিভক্তিকে পাশে রেখে শেষ মুহূর্তে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেন দুজনই।

তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘটনাকে ছাপিয়ে এদিন শহরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মনোনয়নবঞ্চিত হেভিওয়েট ব্যক্তিরা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন কি না, সে বিষয়। বর্তমান মেয়র জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েও এবার পাননি। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সবশেষ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তিনি। নৌকার বিরুদ্ধে মুঠোফোন প্রতীক নিয়ে সেবার জয়ী হয়েছিলেন তিনি। তাই এবার তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হন।

সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারকে গত শনিবার নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রথম মনোনীত করেছিল দলটি। ওই দিন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাঁর নাম চূড়ান্ত হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার হঠাৎ খবর আসে, তাঁকে বদলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে দলটি। রিয়াজুলের বিষয়ে শেষ মুহূর্তে কেন্দ্র জানতে পারে, রিয়াজুল ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। যদিও ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।

মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে দুজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন করার জন্য ছিল তাঁদের অনুসারী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধ আর চাপও। পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার টেবিল হয়ে ওঠে সরগরম। কিন্তু শেষ সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের দুজনের কেউই মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় অনুসারীরা হতাশ হন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে মোট আটজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাঁরা হলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (আওয়ামী লীগ), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম (বিএনপি), জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক (স্বতন্ত্র), জেলা যুবলীগের সদস্য শরীফ হোসেন (স্বতন্ত্র), ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মনিবুল হাসান (স্বতন্ত্র), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তুষার ইমরান, সৈয়দ ফারুক আহমেদ (স্বতন্ত্র) ও তানভীর আহমেদ (স্বতন্ত্র)।

বিকেলে রিয়াজুল দলের মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে তা পরীক্ষা করে দেখেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান ও দপ্তর সম্পাদক শওকত আলী, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন হেলা, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল সোমবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামের বিএনপি থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন নিশ্চিত হয়। তখন জেলা বিএনপির নেতারা বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সর্বসম্মতিক্রমে যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হকের নাম মেয়র পদে সুপারিশ করেছিলেন তাঁরা। যাঁর নাম পাঠানো হয়নি, সেই সিরাজুল কীভাবে মনোনয়ন পেলেন, তা জানেন না তাঁরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের দায় কেন্দ্রের। স্থানীয় বিএনপি কেন্দ্রের ভুল সিদ্ধান্তের দায় নিতে পারে না।

সিরাজুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে আলোচনায় আসে শরীফুজ্জামান শরীফের নাম। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরীফুজ্জামান সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন লাভ করেছিলেন। জেলা কমিটির সুপারিশের বাইরে থেকে সিরাজুলের মনোনয়ন পাওয়ায় শরীফুজ্জামানের ভূমিকা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

আজ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সিরাজুলের সঙ্গে শরীফুজ্জামানের পাশাপাশি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খোন্দকার আবদুল জব্বারসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। খোন্দকার আবদুল জব্বার ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি।

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তরুণ আইনজীবী সৈয়দ ফারুক আহমেদ এবার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ ফারুক আহমেদের মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে বড় বোন সৈয়দা জিন্না আরা শিলা এবং সমর্থক হিসেবে বাবা গিয়াস উদ্দিন আহমেদের নাম দেখা যায়।

আরও পড়ুন