চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

খুলনা জেলার মানচিত্র

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এক ব্যক্তির নামে আসা অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালামের বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে ‘স্বাক্ষর জালিয়াতি’ করে চেকটি নিয়ে এসে তিনি ব্যাংকে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আবদুস সালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামানের মামা। সংসদ সদস্য ওই ইউনিয়নের ভোটার।

চেকটি এসেছে গড়াইখালী ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামের সুকুমার মণ্ডলের নামে। সুকুমার বলেন, গত ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৪০ হাজার টাকার চেকটি এসেছিল। এ–সংক্রান্ত চিঠিও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু টাকা বা চেক হাতে না পাওয়ায় ৫ জুন টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে খুলনা জেলা প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন।

সুকুমার মণ্ডল একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ২০১৯ ও ২০২১ সালে তাঁর শরীরে দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ কারণে এখন ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারেন না। প্রথমবার অস্ত্রোপচারের পর আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের এক নেতার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। এরপর ২০২০ সালে ৪০ হাজার টাকা অনুদান পান। পরে ২০২১ সালে আবার অস্ত্রোপচার হলে বছরের শেষ দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ওই তহবিল থেকে টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন সুকুমার।

ওই তহবিল থেকে ৪০ হাজার টাকার চেক পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে ৭ মার্চ তাঁর কাছে একটি চিঠি আসে বলে জানান সুকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, চিঠিতে চেকের নম্বরও দেওয়া ছিল। পরে ইউএনওর কাছে গিয়ে জানতে পারেন, চেকটি নিয়ে গেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম। কিন্তু চেক নেওয়া–সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে সুকুমার মণ্ডলের নামে স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কোনো আলাপ করেননি। প্রায় তিন মাস হয়ে গেলেও চেকের টাকা পাননি তিনি।

জানতে চাইলে গড়াইখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে যে চেকটি পেয়েছিলেন, সেটি বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের গড়াইখালী এজেন্ট শাখায় জমা দিয়ে টাকা তুলেছিলেন সুকুমার। কিন্তু এজেন্টরা চেকটি পাইকগাছা উপজেলার ইসলামী ব্যাংক কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে হারিয়ে ফেলেন। এ ব্যাপারে তাঁরা পাইকগাছা থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। ওই ৪০ হাজার টাকা এজেন্টের ঘাটতি ছিল। এ কারণে সুকুমারের পরের চেকটি এনে ওই ব্যাংকে জমা দিয়ে ব্যাংকের ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে।

চেক তোলা ও ব্যাংকে জমা দেওয়ার ব্যাপারে সুকুমার মণ্ডলকে কিছু জানানো হয়নি স্বীকার করে আবদুস সালাম বলেন, চেকটি ওই ব্যাংকে জমা রয়েছে।

জানতে চাইলে পাইকগাছার ইউএনও মমতাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সুকুমার মণ্ডলের মতো আরও কয়েকজন দুস্থ মানুষের অনুদানের চেক এসেছিল। সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে চেক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে ওই অনুষ্ঠানে তিনি (ইউএনও) থাকতে পারেননি। সেদিন বিশেষ কাজে তাঁকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যেতে হয়েছিল। পরে গিয়ে দেখেন সুকুমার না আসায় তাঁর পক্ষে স্বাক্ষর করে চেকটি নিয়ে গেছেন চেয়ারম্যান আবদুস সালাম।

সুকুমার মণ্ডল তাঁর কাছে গিয়েছিলেন এবং জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন জানিয়ে ইউএনও মমতাজ বেগম বলেন, ডিসির কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে আজ মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে সুকুমার মণ্ডলের টাকা বা চেক দিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে আজ রাত আটটার দিকে সুকুমার মণ্ডল মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তিনি এখন পর্যন্ত টাকা বা চেক ফেরত পাননি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।