‘ছাওয়া দুটাক নিয়া প্যাট ভরে খাবার পামো বাবা’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর রাউলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

‘স্বামী সামছুল ১০ বছর আগে ছাড়ি গেইছে। দুই সন্তানোক নিয়া একাই সংসার চালাই। খাদ্যসহায়তা পায়া কয়েক দিন ছাওয়া দুটাক নিয়া প্যাট ভরে খাবার পামো বাবা।’ প্রথম আলো বন্ধুসভার খাদ্যসহায়তা পেয়ে কথাগুলো বলেন চর রাউলিয়ার দরিদ্র নারী কাচুয়ানী বেওয়া।

আজ বুধবার দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর রাউলিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে ১০০ মানুষের মধ্যে ঈদ উপলক্ষে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। এর মধ্যে মধ্যে ছিল চাল, ডাল, লবণ, তেল ও আলু।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন চরের বাসিন্দা খলিলুর রহমান, শিক্ষক আবদুল কাদের, মো. মাইদুল ইসলাম, প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি আসিফ ওয়াহিদ, সাধারণ সম্পাদক রাজু আহাম্মেদ, সাবেক সভাপতি মোখলেছুর রহমান, সদস্য জাকির হোসেন, মামুনুল ইসলাম, মাইদুল ইসলাম, সোহেল রানা, হাসান রানা, সফিকুল ইসলাম ও প্রথম আলো কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সফি খান।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হুজুর আলী তাঁর নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময় নাতনি লাভলী নানার হাতে ধরে জমির আইল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এ সময় হুজুর আলী বলেন, ‘অন্ধ মানুষ খুব কষ্ট করি চলি। কামাই কইরবার লোক নাই।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর রাউলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

গ্রামবাসীর সহায়তায় চলি। করোনার সময় মানষের বাড়িত যাওয়া যায় না। সবার অভাব, কার কাছে চান?’ হুজুর আলী আরও বলেন, ‘ওজার সময় ছাওয়াপাওয়ার মুখোত ভালোমন্দ কিছু তুলি দিবার মন করে। তোমার দেওয়া খাদ্য পায়া খুব উপকার হইলো। আল্লা তোমারগুলার ভালো করুক বাবা।’

ছোট দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে এসেছেন আমেনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কাওছার আলী কৃষিকাজ করত। অনেক দিন থাকি অসুস্থ। কাজ কইরবার পায় না। দুই ছাওয়াক নিয়া কোনোরকমে সংসার চলাই। খাবারে জোগাড় করি, না স্বামীর চিকিৎসা করাই। এগলা খায়া কয়দিন চলবার পামো।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর রাউলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

চর রাউলিয়ার ঘোগাদহ ইউনিয়নের মধ্যে। চরটি গঙ্গাধর ও দুধকুমার নদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখানে বসবাসকারী সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। অধিকাংশ দিনমজুর। কৃষিকাজ করেন। অনেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর রাউলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, চরের মানুষ গরিব। গত বছর নদীভাঙনের শিকার হতে হয়। করোনাকালে অধিকাংশ বাইরে কাজে যেতে পারেনি। নদীতে পানি কম থাকায় মাছ খুব একটা পাওয়া যায় না। প্রথম আলো বন্ধুসভার ত্রাণগুলো পেয়ে সবার ভীষণ উপকার হলো। রোজার দিনে গরিব লোকজন পেট ভরে খেতে পারবে।