জাপা নেতাকে নির্যাতনের বিচারের দাবিতে কাদের মির্জার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-মানববন্ধন

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা সাইফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদে আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির বিক্ষোভ মিছিল। আজ রোববার দুপুর ১২টায় নোয়াখালী শহরের আবদুল মালেক উকিল সড়কে।
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদ ও ঘটনার বিচারের দাবিতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। জেলা জাপার উদ্যোগে আজ রোববার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত জেলা শহরের টাউন হল মোড় ও প্রধান সড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে শহরের সমবায় মার্কেটে জেলা জাপার কার্যালয়ে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পার্টি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমবেত হন। দুপুর ১২টার দিকে জাপা কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলকারীরা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টাউন হল মোড়ে গিয়ে মানববন্ধন করেন। এ সময় সাইফুল ইসলামের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয় ও তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি অহিদ উদ্দিন মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোচাদ্দেকুর রহমান, তরুণ পার্টির সভাপতি সৌরভ হোসেন, শ্রমিক পার্টির সভাপতি মিরন শিকদার, পৌর জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক নূর নবী। কর্মসূচি পরিচালনা করেন জেলা যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন।

বক্তারা বলেন, জাতীয় পার্টির নেতা সাইফুল ইসলামকে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে পৌরসভার টর্চার সেলে আটকে রেখে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তা কোনো মানুষ কোনো মানুষকে করতে পারে না। একটা হিংস্র পশু যেমন আচরণ করে, জাপা নেতার সঙ্গে সে রকম আচরণ করা হয়েছে। তাঁর ওপর চালানো নির্যাতনের ছবি দেখলে যেকোনো মানুষের বুক কেঁপে উঠবে। অথচ নির্যাতনের মুহূর্তে সাইফুলের আকুতিতে কাদের মির্জার বুক কাঁপেনি।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা সাইফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদে আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টি মানববন্ধন করেছে। আজ রোববার দুপুর ১২টায় নোয়াখালী শহরের টাউন হল মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

বক্তারা আরও বলেন, সাইফুল ইসলাম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট আসনে প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতি সম্মান জানিয়ে তখন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। আজ সেই সম্মানের নির্মম প্রতিদান দিলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা। একটি রাজনৈতিক দলের উপজেলা পর্যায়ের নেতাকে প্রকাশ্যে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানোর ঘটনা নজিরবিহীন। ওই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাদের মির্জা ও তাঁর বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।

গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জাতীয় পার্টির নেতা সাইফুল ইসলামকে বসুরহাট বাজারের কালামিয়া ম্যানশন নামের একটি বিপণিবিতানের সামনে থেকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তুলে নিয়ে যান। এরপর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পৌরসভা ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফকে ডেকে পাঠিয়ে সাইফুল ইসলামকে তাঁর কাছে তুলে দেন কাদের মির্জার অনুসারীরা।

এরপর পরিবারের সদস্যরা সাইফুল ইসলামকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিরাপত্তার কারণে ভর্তি না করে একটি বাসায় রাখা হয়। সেই বাসায় থেকে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন