ঢাবি ছাত্র সৌরভের পড়াশোনার খরচ দেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৌরভ দাসের পড়াশোনার খরচ জোগাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসন। স্নাতক প্রথম বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত বছরে দুই কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে তাঁকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম নিজ কার্যালয়ে সৌরভের হাতে পড়াশোনার খরচ বাবদ প্রাথমিকভাবে নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন।
গতকাল বুধবার প্রথম আলোয় ‘সামনের দিনগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঢাবি ছাত্র সৌরভ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়। সেখান থেকে সৌরভের বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। এরপরই সৌরভের পড়াশোনার খরচ চালানোর দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সৌরভকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য সৌরভকে প্রতি ছয় মাস পর সশরীর বা ই-মেইলের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) কাছে একটি দরখাস্ত লিখতে হবে। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সৌরভের ব্যাংক হিসাবে ২৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেবেন। তবে জেলা প্রশাসন সৌরভকে ভালো ফলাফল অব্যাহত রাখার শর্ত দিয়েছেন।
সৌরভ দাসের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কানিউচ্ছ গ্রামে। বর্তমানে তিনি পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষে। থাকেন জগন্নাথ হলে। সৌরভের বাবা বিষ্ণু দাস ও মা চম্পা রানী দাস। আরও তিন সন্তানকে নিয়ে মা গ্রামেই থাকেন। আর বাবা বিষ্ণু দাস থাকেন চট্টগ্রামে। সেখানে ফেরি করে স্টিলের হাঁড়িপাতিলসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেন তিনি।
জন্মের পর থেকেই সৌরভ অভাব দেখেছেন। দরিদ্র বাবার অনটনের সংসারে তাই বেশি দিন থাকা হয়নি সৌরভের। দুরন্তপনার শৈশব কেটেছে নানাবাড়ি নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামে। সেখানে থেকেই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর পরিবার ও আশপাশের মানুষের জন্য গৌরব বয়ে নিয়ে আসেন সৌরভ। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সৌরভকে ডেকে নিয়ে যান জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম। এ সময় তিনি সৌরভের পড়াশোনা ও পরিবারের বিষয়ে খোঁজ নেন। তিনি সৌরভকে পড়াশোনার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন, সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক, সহকারী শিক্ষক স্বপন মিয়া, সাংবাদিক মাসুকুর রহমান, আবুল হাসনাত, মাইনুদ্দিন রুবেল ও মাজহারুল করিম।
সৌরভ দাস প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘টাকার জন্য বই কিনতে পারছিলাম না। করোনার কারণে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। একটা মুঠোফোন আছে, কিন্তু সেটায় জুম অ্যাপ সাপোর্ট করে না বলে ক্লাসও করতে পারি না ঠিকমতো। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমি এখন বইসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারব। জেলা প্রশাসনের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।’
জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সৌরভের পড়াশোনার সব দায়দায়িত্ব নিয়েছি। স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা পর্যন্ত সৌরভকে পড়াশোনার খরচ হিসেবে প্রতি ছয় মাস পরপর ২৫ হাজার টাকা দেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসন। আশা করি, এতে তাঁর খাতা-বই কেনাসহ পড়ার খরচ হয়ে যাবে।’