তিশার চিকিৎসায় পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অসুস্থ মেধাবী শিক্ষার্থী তিশা আক্তারের চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা ও একটি হুইল চেয়ার দেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন। আজ সোমবার দুপুরেপ্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে হাড়ের ভেতরে টিউমার ধরা পড়া মেধাবী শিক্ষার্থী তিশা আক্তারের (১৩) চিকিৎসায় পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান। আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে চিকিৎসার জন্য তিশার মা আরজু আক্তারের হাতে তিনি ২০ হাজার টাকা ও একটি হুইলচেয়ার তুলে দেন। ১৩ নভেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আবার পায়ে হেঁটে সূর্যের আলো দেখতে চায় তিশা’ শিরোনামে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

তিশা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শিকারপুর তালপট্টি গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইনডিপেনডেন্ট স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় সে। এরপর ভর্তি হয় সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। কিন্তু এক মাস ধরে সে বাড়ির বিছানায় শুয়ে আছে। তার মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে হাড়ের ভেতরে মরণব্যাধি টিউমার ধরা পড়েছে। এরপর থেকে শয্যাশায়ী জীবন কাটাচ্ছে সে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১০-১২ লাখ টাকা। কিন্তু টাকার অভাবে তিশার চিকিৎসা আটকে গেছে।

এদিকে মেধাবী এই কিশোরীকে বাঁচাতে আর্থিক সহযোগিতার আশায় তার শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন মা আরজু আক্তার। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের কাছে আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে তিশার চিকিৎসার জন্য এই অর্থসহায়তা দেন। এ ছাড়া বিছানা থেকে উঠে বাইরে যাওয়ার জন্য তিশাকে একটি হুইলচেয়ারও প্রদান করেন তিনি।

প্রথম আলোতে তিশার প্রতিবেদন দেখে আপাতত চিকিৎসা শুরুর জন্য একটা অর্থ দিয়েছি। সামনে আরও তহবিল গঠন করে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
হায়াত-উদ-দৌলা খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক
অসুস্থতার আগে (বাঁয়ে) ও অসুস্থতার পরে বিছানায় পড়ে আছে (ডানে) তিশা
সংগৃহীত ও প্রথম আলো

চার মেয়ে ও দুই ছেলে মধ্যে তিশা হাবিবুর-আরজু দম্পতির পঞ্চম সন্তান। বাড়িতে ও বিদ্যালয়ে সবাই ‘তিশামণি’ নামেই ডাকে তাকে। তিশার বড় বোন স্বর্ণা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিশা খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। পড়াশোনায় খুব মেধাবী। ২০১৯ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৫৭৫। এই পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছে আমার বোন। এর আগে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তার ক্লাস রোল ছিল ১। কিন্ডারগার্টেনের সব বার্ষিক পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। কিন্তু টাকার অভাবে আজ বিছানায় শুয়ে থাকা তিশার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে।’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে তিশার শরীরে প্রথম ব্যথা শুরু হয়। ১০ অক্টোবর পরিবারের লোকজন তাকে জেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে ১৩ অক্টোবর তাঁরা তিশাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিশাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ২৭ অক্টোবর ঢাকার একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিশার এমআরআই পরীক্ষা করান। পরীক্ষায় তিশার মেরুদণ্ডের ৬ শতাংশ হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে দেখা যায় এবং সেখানে একটি টিউমার ধরা পড়ে। টিউমারটি মেরুদণ্ডের হাড় থেকে বাইরে বের হয়ে এসেছে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিশাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিশার মেরুদণ্ডে হাড় প্রতিস্থাপন ও টিউমার সরানো বাবদ তিন মাস সময় লাগবে। এই চিকিৎসার জন্য ব্যয় হবে ১০-১২ লাখ।

আরও পড়ুন
মেধাবী তিশার অর্জন
প্রথম আলো

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আলোতে তিশার প্রতিবেদন দেখে আপাতত চিকিৎসা শুরুর জন্য একটা অর্থ দিয়েছি। সামনে আরও তহবিল গঠন করে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনের সাংসদ মাননীয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’ সবাই এগিয়ে এলে তার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা সম্ভব বলে জানান জেলা প্রশাসক।

তিশাকে সহযোগিতার জন্য একটি ব্যাংক হিসাব নম্বর খোলা হয়েছে। ব্যাংক হিসাব নম্বরটি হলো ২১২১৫৭০০০৯৩১৬, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা। কেউ চাইলে বিকাশের মাধ্যমে তিশাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। তিশার মা আরজু আক্তারের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরটি হলো ০১৭৮০৪২০৯৩৫।