ত্বকী হত্যার ১১০ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন, নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তার দাবি
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১০ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। রোববার সন্ধ্যায় নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার মিলনায়তনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে বক্তারা ত্বকী হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
সংগঠনটির সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকী হত্যার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘ত্বকীকে কী হত্যা করা হয়েছে, নাকি হয়নি? হত্যা হলে বিচার করতে এত দ্বিধা কেন? স্পষ্ট করে যদি বলে দেন, দলীয় কেউ হত্যা করলে সেটার বিচার হবে না। তাহলে আমরা আর বিচার চাইব না, অন্য পথ ধরব। দেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হলে একটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র তৈরি হয়েও তা ৯ বছর আটকে থাকে না।’
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, খেলাঘরের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাহা প্রমুখ।
হালিম আজাদ বলেন, ‘তদন্ত সংস্থা র্যাব বলেছে, আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অথচ আজমেরী ওসমান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা দ্রুত আজমেরী ওসমানের গ্রেপ্তার চাই এবং এ হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমানের গ্রেপ্তার চাই।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শামীম ওসমান একজন আইনপ্রণেতা হয়ে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়ে তাঁর সহকর্মীকে আদালতে যেতে নিষেধ করেন। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোর অপরাধে, ত্বকীকে হত্যার নির্দেশের অপরাধে আমি শামীম ওসমানের গ্রেপ্তার দাবি করছি।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী নিখোঁজ হয়। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাঁদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তাঁরা আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করবে। কিন্তু সেই অভিযোগপত্র আজও আদালতে দাখিল করা হয়নি। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।