‘দেশে ফিরতে পারব, ভাবি নাই’

ভারতের কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বাংলাদেশি নাগরিকেরা। আজ বিকেলে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ভারতে বেড়াতে গিয়ে আসামে বন্দী ২৫ বাংলাদেশি কারাগার থেকে আজ বুধবার ছাড়া পেয়েছেন। বিকেলে তাঁরা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন। এ সময় তাঁদের মুক্তিতে ভূমিকা রাখা রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

ছাড়া পাওয়াদের একজন মানিক মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘জেলে থাকতে আমাদের সঙ্গের একজন মারা গেছেন। এতে সবাই ভেঙে পড়ি। আমরা ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরতে পারব, পরিবারের সদস্যদের মুখ দেখতে পারব, ভাবি নাই। আমরা গরিব মানুষ। সবাই চেষ্টা না করলে জেলখানায় পচে মরতাম।’

আমিনুল ইসলাম নামের আরেকজন জানান, শনিবার সন্ধ্যায় আসামের ধুবড়ির বিলাসীপাড়া মহকুমার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তাঁদের মুক্তির আদেশ দেন। আজ সকালে সাড়ে ৯টায় তাঁরা ছাড়া পান। এরপর ধুবড়ি থানার সহায়তায় বিশেষ গাড়িতে করে পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা স্থলবন্দরে আসেন। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল চারটায় বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে তাঁরা দেশে ঢোকেন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুড়িগ্রামের চিলমারীর ২৬ জন ভিসা নিয়ে ভারতে বেড়াতে যান। করোনার কারণে তাঁরা সেখানে আটকে পড়েন। ভিসার মেয়াদ পার হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আজ তাঁরা দেশে ফিরলেন।

ওই ২৫ বাংলাদেশির দেশে ফেরার খবর পেয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ও সদস্য জামিউল ইসলাম বুড়িমারী যান। তাঁরা ওই ২৫ জনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

ভারতের কারাগার থেকে ফেরা বাংলাদেশিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির নেতা-কর্মীরা। আজ বিকেলে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে
ছবি: প্রথম আলো

গণকমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ভ্রমণের ভিসা নিয়ে চিলমারীর ২৬ জন ভারতে বেড়াতে যান। করোনার কারণে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করায় তাঁরা সেখানে আটকে পড়েন। বাধ্য হয়ে সেখানে আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে কেউ মাছ মেরে এবং বিভিন্ন খামারে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। লকডাউন শিথিল করলে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে তাঁরা ২ মে দুটি মিনিবাসে করে আসামের জোরহাট থেকে পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। পরদিন সকালে বাহালপুর এলাকায় পুলিশ তাঁদের আটক করে। ৫ মে তাঁদের বিরুদ্ধে ভিসার শর্তভঙ্গের মামলা হয়। ১ জুলাই কারাগারে বকুল মিয়া নামের একজন মারা যান। চার দিন পর তাঁর লাশ ফেরত পাঠানো হয়।

বন্দী বাকি ২৫ বাংলাদেশির মুক্তির দাবিতে পরিবার এবং রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির নেতা-কর্মীরা কুড়িগ্রাম ও চিলমারীতে একাধিক মানববন্ধন করেন। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেন।

গণকমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, ‘ওই ২৫ জনের মুক্তির দাবিতে আমরা একাধিকবার মানববন্ধন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন জানাই। ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভারতের মানবাধিকারকর্মী উজ্জ্বল ভৌমিকের সহযোগিতায় সেখানে রাজশ্রী দাস গুপ্ত ও অসীম দাস গুপ্তকে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সবার প্রচেষ্টায় ওই ২৫ জন মুক্তি পান।’

জানতে চাইলে ভারতীয় আইনজীবী রাজশ্রী দাশ গুপ্ত মুঠোফোনে বলেন, ধুবড়ির বিলাসীপাড়া মহকুমা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জতিরুপা হালৈর আদালত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ওই ২৫ বাংলাদেশিকে মুক্তি দেন। রোববার ছুটির দিন থাকায় তাঁরা ছাড়া পাননি। আজ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকালে তাঁরা ছাড়া পান।

বাংলাদেশ বর্ডার ভিকটিম রেসকিউ ফোরামের আহ্বায়ক আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘২৫ বাংলাদেশির মুক্তির জন্য ভারত ও বাংলাদেশ সরকার এবং কূটনীতিকদের প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন।’

আরও পড়ুন