পানি বাড়ায় ৩৫টি স্থানে ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে

জেলার হাওর, নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এতে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে পানির চাপ বেড়ে গেছে।

বিভিন্ন হাওরে ঢুকে পড়েছে পাহাড়ি ঢলের পানি। তলিয়ে গেছে বোরো ধান। আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা। গতকাল সিলেট সদরের বাকগুল হাওরে
ছবি: আনিস মাহমুদ

সুনামগঞ্জে উজানের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার হাওর, নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এতে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে পানির চাপ বেড়ে গেছে। জেলার সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ঢলের পানির চাপ বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

এসব উপজেলার অন্তত ৩৫টি স্থানে ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। একটি বাঁধে একাধিক স্থানও ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে তাহিরপুর উপজেলার ৬টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ৬টি, শাল্লায় ৩টি, জগন্নাথপুরে ১০টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৩টি, জামালগঞ্জে ৩টি, সদর উপজেলায় ২টি; দিরাই ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ১টি স্থানের বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব স্থানে কোথাও ধস, কোথাও ফাটল ও চিড় ধরেছে। তবে তাৎক্ষণিক সংস্কারকাজও চলছে।

হাওরের ফসল নিয়ে আমি শঙ্কিত। আজকের পরিস্থিতি ২০১৭ সালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। শুধু বাঁধ দিয়ে যে ফসল রক্ষা হবে না, সেটি আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। ফসল রক্ষা করতে হলে বাঁধের সঙ্গে নদী ও খাল খনন করতে হবে। কিন্তু তা হয়নি
মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান

হাওর আন্দোলনের নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ফসলহানি ঘটতে পারে। তবে হাওরে বড় সমস্যা হলো, সময়মতো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু এবং শেষ না হওয়া। এটা করা গেলে বাঁধগুলো দুর্বল হতো না। অসময়ে কাজ করার কারণে বৃষ্টি ও ঢলের পানির চাপ সামলাতে পারে না দুর্বল বাঁধগুলো। এবারও সেটি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেছেন, ‘হাওরের ফসল নিয়ে আমি শঙ্কিত। আজকের পরিস্থিতি ২০১৭ সালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। শুধু বাঁধ দিয়ে যে ফসল রক্ষা হবে না, সেটি আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। ফসল রক্ষা করতে হলে বাঁধের সঙ্গে নদী ও খাল খনন করতে হবে। কিন্তু তা হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা বলছেন, হাওরে ইচ্ছা করলেই সব কিছু সময় ধরে করা যায় না। নানা সীমাবদ্ধতা থাকে। অনেক সময় পানি নামতে দেরি হয়। তখন প্রকল্প নির্ধারণে সমস্যা হয়। আবার কখনো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে সময় বেশি লাগে।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়ে যাওয়ায় তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান, শনি, গুরমা, শমসাসহ সব কটি হাওরের ফসলই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল ও সোনামোড়ল হাওরের বিভিন্ন বাঁধের পাঁচ–ছয়টি স্থান ঝুঁকিতে আছে। দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ হচ্ছে হাওরের তুফানখালী এলাকায়। সেটিতে ফাটল দেখা দিলে তাৎক্ষণিক বস্তা ফেলে সংস্কার করা হয়। তবে ঝুঁকি রয়ে গেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। সোমবার শাল্লা উপজেলার ধারাইন নদীর পাড় উপচে মুনয়ারখলা হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে অন্তত ২০০ একর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সেন।

সুনামগঞ্জে সাধারণ বৃষ্টি হচ্ছে। ভয়ের কারণ উজানের বৃষ্টি। স্বাভাবিক ঢল এলে সেটিকে মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেটি অস্বাভাবিক। তবে আমরা মাঠে আছি। যে বাঁধেই কোনো সমস্যা হচ্ছে, সেখানেই কাজ করা হচ্ছে।
মো. জহুরুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, পাউবো, সুনামগঞ্জ

জামালগঞ্জ উপজেলার শনির হাওর অংশে নান্টুখালী ও ঝালখালী বাঁধের কিছু স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় সেগুলোতে কাজ চলছে বলে জানান উপজেলার দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী রেজাউল কবির। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আঙ্গারুলি ও খরচার হাওরের হরিমন, বেকাভাঙ্গা, কালাগাঙের ভাঙা এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধে পানির প্রচুর চাপ আছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার নাইন্দার হাওরের একটি বাঁধে ফাটল দেখা দিলে সেটিও সংস্কার করা হয়। সদর উপজেলার কানলার হাওরের বিরামপুর এলাকার বাঁধটিও পানি প্রবল চাপে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকেরা। গতকাল সোমবার সকালে এলাকার ধলাই নদের পাড় উপচে ছোট কানলার হাওরে শতাধিক একর জমির ধান নিমজ্জিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সুনামগঞ্জে সাধারণ বৃষ্টি হচ্ছে। ভয়ের কারণ উজানের বৃষ্টি। স্বাভাবিক ঢল এলে সেটিকে মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু যে পরিস্থিতি হয়েছে সেটি অস্বাভাবিক। তবে আমরা মাঠে আছি। যে বাঁধেই কোনো সমস্যা হচ্ছে সেখানেই কাজ করা হচ্ছে।’

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাওরে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। পাউবো হাওরের এসব ফসল রক্ষায় ৭২৭টি প্রকল্পে ৫৩০ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করেছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২১ কোটি টাকা।