পুলিশকে ছিনতাইয়ের গল্প বলে নিজেই গেলেন ফেঁসে

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি অটোরিকশার চালক বাবুল মিয়া। গতকাল বুধবার
প্রথম আলো

সবে এক মাস হলো ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতে শুরু করেছেন বাবুল মিয়া (৩২)। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে তাঁর বাড়ি। অটোরিকশাটির মালিক পাশের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম। তিনি দৈনিক ৪০০ টাকা জমায় বাবুল মিয়াকে এক মাসে অটোরিকশাটি চালাতে দেন। সঙ্গে শর্ত দিয়েছিলেন, রাতের বেলায় চালানো যাবে না। চুরি-ছিনতাই এড়াতেই জহিরুলের এই শর্ত।

কিন্তু অন্যে চুরি করবে কি, বাবুল মিয়া নিজেই ভাড়ায় চালানো অটোরিকশাটি আত্মসাতের পরিকল্পনা আঁটেন। রাতে চালানো নিষেধ করা হলেও চার-পাঁচ দিন যাবৎ তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে অটোরিকশাটি রাতে চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাঁর অটোরিকশাটি ছিনতাই হয়েছে বলে ‘গল্প’ সাজান বাবুল।

বাবুল মিয়া জানিয়েছিলেন, রাত ২টার দিকে দাউদকান্দির আমিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩০০ টাকা ভাড়ায় একজন যাত্রী নিয়ে তিনি দাউদকান্দি উপজেলার পিতাম্বর্দী বাজারে যাচ্ছিলেন। রাত তিনটার দিকে সড়কের গোপালপুর গ্রামের কাছে পৌঁছালে চার ছিনতাইকারী সড়কের ওপর একটি শিশুগাছ কেটে ফেলে অটোরিকশাটির গতি রোধ করে। এ সময় তাঁরা বাবুল মিয়াকে দেশি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে সড়কের পাশের একটি পুকুরপাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে এলোপাতাড়ি পেটালে বাবুল মিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে গামছা দিয়ে বাবুল মিয়ার মুখ বেঁধে তাঁর সঙ্গে থাকা নগদ তিন হাজার টাকা, মুঠোফোন ও অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সকালে খবর পেয়ে স্বজনেরা বাবুল মিয়াকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

বাবুল মিয়ার মা ফাতেমা বেগম ও স্ত্রী সালমা আক্তার তখন বলেছিলেন, ছিনতাইকারীরা (বাবুল মিয়াকে) পেটানোর সময় নিজেদের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা করেছিল হাত-পা বেঁধে পুকুরে ফেলে মেরে ফেলার জন্য। আল্লাহ রক্ষা করেছেন। তবে অটোরিকশার যাত্রীকে ছিনতাইকারীরা কিছুই বলেনি।

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনও বলেছিলেন, আহত বাবুল মিয়া শরীরে যথেষ্ট ব্যথা অনুভব করছেন। ভর্তি করার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে।

‘গল্প’ সাজিয়েই বাবুল থেমে থাকেননি, মালিক জহিরুলকে ‘ছিনতাইয়ের গল্প’ বিশ্বাস করাতে তিনি বেশ ‘মেহনত’ও করেন। বাবুলের কথা সন্দেহজনক মনে হলে আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনার বিবরণ ও বাস্তবতার মিল খুঁজে না পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, বাবুল মিয়া অটোরিকশাটি আত্মসাৎ করতে নাটক সাজিয়েছেন। পুলিশ পরে অটোরিকশা আত্মসাতের অভিযোগে বাবুলকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে আজ বিকেলে অটোরিকশার মালিক জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের আষাঢ়ে গল্প খোলাসা করে আসল ঘটনা জানান তিনি।

বাবুলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে আমিরাবাদ থেকে একজন যাত্রী নিয়ে পিতাম্বর্দী বাজারে রওনা দেন বাবুল মিয়া। আমিরাবাদ-পিতাম্বর্দী সড়কের চক্রতলা বাজারে পৌঁছালে বাজারের পাহারাদার গোলাম মোস্তাফা তাঁকে এত রাতে পিতাম্বর্দী যেতে মানা করেন। বাবুল মিয়া পিতাম্বর্দী থেকে হাসপাতালে রোগী আনার কথা বলে চক্রতলা বাজার অতিক্রম করেন। রাত তিনটার দিকে সড়কের গোপালপুর এলাকায় পৌঁছার পর গ্রামের একটি পুকুরপাড়ে গিয়ে বাবুল নিজেই নিজের পা একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে সেখানে অবস্থান করেন। সকালে নিজেই দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ভর্তির সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেজিস্ট্রার খাতায় দেখান, আলাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তাঁকে এনে ভর্তি করেছেন। এ ঘটনার পর রাতেই বাবুল নিজেই খালি অটোরিকশাটি চালিয়ে পুনরায় আমিরাবাদের দিকে ফিরে আসেন।

মামলার বাদী জহিরুল ইসলাম বলেন, বাবুল মিয়া মিথ্যা নাটক সাজিয়ে এখন নিজেই ধরা খেয়েছেন।

দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা নাটক সাজানোর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামি অটোরিকশাচালক বাবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন