ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সির ছোট ভাই জামাল মুন্সি (৫০) নিহতের ঘটনায় দিন দিন উত্তেজনা বাড়ছে। রাত হলেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে বাড়িঘর ও দোকানে চলে ভাঙচুর ও লুটপাট।
এদিকে হামলা ও ভাঙচুরের আশঙ্কায় চরচারতলা গ্রামের অনেক পরিবারের নারী ও পুরুষ সদস্যরা ঘরছাড়া। বাড়িঘরে তালা লাগিয়ে পরিবারগুলোর সদস্যরা অন্যত্র ঠাঁই নিয়েছেন। গত শনিবার রাত থেকে চেয়ারম্যানের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ও দোকানে ভাঙচুর-লুটপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলে নেওয়া শুরু করে বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে প্রতিপক্ষের ছোড়া বল্লমের আঘাতে নিহত হন জামাল মুন্সী। জামাল চরচারতলার মুন্সিবাড়ির ফজলুল হক মুন্সির ছেলে এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সির ছোট ভাই। হানিফ মুন্সি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়কও। এ ঘটনায় চরচারতলা ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন খন্দকারসহ ২৭ জনকে আসামি মামলা করেন হানিফ মুন্সির আরেক ছোট ভাই জাহাঙ্গীর মুন্সি।
হামলার শিকার ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার চরচারতলা গ্রামের লতিফ বাড়ির বাদল মিয়া ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সেলিম পারভেজের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট, সেলিম মিয়ার মালিকাধীন আনিসা পরিবহনের একটি বড় নৌকা লুট, গ্রামের ভেতরে থাকা জাকির হোসেন ও মনা মিয়ার দুটি দোকানে লুটপাট এবং আশুগঞ্জ পুরাতন ফেরিঘাটে থাকা সেলিম মিয়ার তিনটি দোকান দখলে নিয়েছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সীর লোকজন।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে বাড়িতে বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বাড়িগুলোতে বসবাসকারী পরিবারের লোকজন দেখা যায়নি। বাজারের অন্তত ২০টি দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গত রোববার বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হানিফ মুন্সির লোকজন প্রতিপক্ষের ১০-১৫টি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।
মুঠোফোনে লতিফ বাড়ির বাসিন্দা সেলিম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সীর চাচাতো ভাই আরমান মুন্সী তাঁর আসিনা নৌপরিবহনের নৌকা লুট করে নিয়ে গেছেন। ওই নৌকায় ৯০০ মণ ধান ধরে। তিনি বলেন, আশুগঞ্জ ফেরিঘাটে থাকা তাঁর তিনটি দোকানও উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন দখলে নিয়েছেন।
ওই বাড়ির জাকির হোসেন ও মনা মিয়া বলেন, দোকানের শাটার বন্ধ করে উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন লুটপাট ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। তাঁরা দোকানের শাটার বন্ধ করে রেখেছিলেন। রাত পর্যন্ত পুলিশি পাহারা থাকে। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে লুটপাট ও ভাঙচুর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, আশুগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সীর পকেটের লোক। এটা উপজেলার সবাই জানে। এখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভাঙচুর-লুটপাট হচ্ছে। অথচ ওসি সব দেখেও না দেখার ভান করছেন।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সেলিম পারভেজের স্ত্রী আইমন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাড়িতে পাঁচটি পাকা ভবন রয়েছে। গতকাল দিবাগত মধ্যরাতে তাঁর ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন। রাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে এসব তাণ্ডব চালান তাঁরা। ঘরের ফ্রিজের মধ্যে রাখা খাবারগুলো পর্যন্ত তাঁরা নিয়ে গেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর ঘরে থাকা ৬৫ ভরি স্বর্ণালংকার, জমির দলিল, দুই মেয়ে ও তাঁর পাসপোর্টও লুট করে নিয়ে গেছেন। দুই লাখ টাকা মূল্যের ফ্রিজটা তাঁরা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। আজ সকালে ওসিকে এসব জানিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর লোকজন কোনো ধরনের ভাঙচুর ও লুটপাট করছেন না। প্রতিপক্ষের লোকজন নিজেরাই এসব করছেন, যেন তাঁরা কোনো সুবিধা নিতে পারেন।
জানতে চাইলে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা গ্রামের ভেতরে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে রেখেছেন। ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে কোনো ঘটনা পুলিশকে কেউ এখনো জানাননি। হত্যা মামলায় অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ ঠিকমতোই নিজেদের কাজ করছে বলে দাবি করেন ওসি।