প্রার্থীর ‘অপকর্মের’ দায়ে কমিটি বিলুপ্ত করায় ক্ষুব্ধ জাপা নেতারা

মো. জসিম উদ্দিন

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতারা। তাঁরা বলছেন, দলের প্রার্থী তাঁদের কিছু না জানিয়েই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। আবার এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় জাপা তাঁদের কিছু জিজ্ঞেস না করেই কমিটি বিলুপ্ত করেছে। ব্যক্তির ‘অপকর্মের’ দায় দলের ওপর চাপানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁরা।

যেকোনো পরিস্থিতিতে শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলের মনোনয়ন নিয়েছিলেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। কিন্তু তিনি গত রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাশেম খান। এ ঘটনায় জসিম উদ্দিনকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। একই সঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার বিকেলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের কাছে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসেম খানও উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর জসিম উদ্দিন তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে আঁতাত করে অর্থের বিনিময়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন জাপার নেতারা।

জসিম আমার কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘আমার দিকে খেয়াল রাখবেন। দলের নেতা-কর্মীদের দিকে খেয়াল রাখবেন।’
আবুল হাসেম খান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, কুমিল্লা–৫

বিলুপ্ত কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল কবীর মোহন বলছেন, জসিম প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন দলের কাউকে না জানিয়ে। টাকার বিনিময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে আত্মগোপনে আছেন। এখন জেলা ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কমিটি বিপাকে পড়ল।

একই কমিটির সদস্যসচিব হুমায়ুন কবির মুন্সী বলেন, ‘জসিমের অপকর্মের দায় তো আমরা নিতে পারি না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ফোনও বন্ধ রাখেন। মাঝখানে আমরা বলির পাঁঠা হলাম।’

টাকার বিনিময়ে জাপার প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর গুঞ্জন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসেম খান বলেন, ‘ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচং উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে নিয়েই জসিম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় আমিও রিটার্নিং কর্মকর্তার (জেলা প্রশাসক) দপ্তরে ছিলাম। জসিম আমার কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি। শুধু বলেছিলেন, “আমার দিকে খেয়াল রাখবেন। দলের নেতা-কর্মীদের দিকে খেয়াল রাখবেন।”’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রে জাপার প্রার্থীর প্রস্তাবকারী ছিলেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহআলম সরকার। তিনি বলেন, ‘জসিম উদ্দিন গোপনে আঁতাত করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আমি প্রত্যাহারের বিষয়টি পরে শুনেছি। জেলা কমিটিও বিষয়টি জানে না। তিনি একা একা কয়েকজন কর্মী নিয়ে এই কাজ করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। দলকেও বিপদে ফেলেছেন।’

বুড়িচং উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সমর্থনকারী আমি। বুড়িচং উপজেলার কোনো নেতা জানেন না জসিম ভাই নির্বাচন থেকে সরে যাবেন। প্রত্যাহারের দিন আমরা কেউ ছিলাম না।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে গত দুই দিনে অন্তত ১০ বার জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হয়। প্রতিবারই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গত ১৬ জুন বিকেলে মুঠোফোনে জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা আমাকে অনুরোধ করেন। আমি ওনাদের বলেছি, আমাকে গুলি করে মেরে ফেললেও সরব না। আপনারা জি এম কাদের সাহেবের কাছে যান। তিনি পার্টির চেয়ারম্যান। দলের নির্দেশ ছাড়া নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। জি এম কাদের সাহেব নির্দেশ দিলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব।’

আরও পড়ুন

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক এয়ার আহমেদ সেলিম আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৮৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে আসছি। কখনো দলের বাইরে যাইনি। কেন্দ্র ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘুরেফিরে আছি। দলের ভাবমূর্তি কখনো ক্ষুণ্ন করিনি। জসিম উদ্দিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন, এটা আমরা জানি না। দল কমিটি বিলুপ্ত করার আগে আমাদের জিজ্ঞেস করতে পারত। জসিমের দলীয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের বলি হলাম আমরা।’

গত ১৪ এপ্রিল এই আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুল মতিন খসরু মারা যান। শূন্য এই আসনে উপনির্বাচনে ১৫ জুন দুইজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জসিম উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ২৪ এপ্রিল একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসেম খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আগামী ২৮ জুলাই এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।