ফুল বিজুতে ফুল ভাসিয়ে রোগমুক্ত পৃথিবীর প্রার্থনা

চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার রাবার ড্যাম এলাকায়
ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

বাংলা পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছর বরণ উপলক্ষে পাহাড়ে শুরু হয়েছে প্রাণের উৎসব বৈসাবি। এরই একটি অংশ চাকমাদের ফুল বিজু উৎসব। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে ফুল বিজু উৎসব চলছে।

এ উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকমারা বিভিন্ন নদী, ছড়া ও ঝরনায় ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা রোগ পৃথিবীর প্রার্থনা করেছেন।

চাকমাদের বিশ্বাস, এ ফুল উপগুপ্ত বুদ্ধের উদ্দেশ্যে ভাসানো হয়। প্রদীপ জ্বালিয়ে আর ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করলে পুরোনো বছরের গ্লানি মুছে গিয়ে নতুন বছর সুখ শান্তি বয়ে আনে।

কষ্ট করে হলেও দূর থেকে এসেছি, মনের শান্তির জন্য।
অন্তরা চাকমা

যুগ যুগ ধরে চাকমারা এ উৎসব পালন করে আসছেন। এবার সবার প্রার্থনা, করোনামুক্ত স্বাভাবিক পৃথিবীর। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার রাবার ড্যাম এলাকায় চেঙ্গী নদীতে প্রদীপ জ্বালিয়ে ফুল ভাসাতে এসেছেন প্রবীণ ব্যক্তি অন্তরা চাকমা। আট কিলোমিটার দূরে পুজগাং এলাকা থেকে তিনি এসেছেন। অন্তরা বলেন, ‘কষ্ট করে হলেও দূর থেকে এসেছি, মনের শান্তির জন্য। করোনার কারণে গত দুই বছর ফুল বিজুতে চেঙ্গী নদীতে আসা হয়নি। এবার উপগুপ্ত বুদ্ধের কাছে প্রাণ ভরে প্রার্থনা করলাম, পৃথিবী পুরোপুরি করোনামুক্ত হওয়ার।’

সকাল থেকে পানছড়ি রাবার ড্যাম ও খাগড়াছড়ি খবংপুড়িয়া এলাকায় চেঙ্গী নদীর পাড়ে বিভিন্ন বয়সের হাজারো মানুষ ফুল ভাসাতে চলে আসেন। রাবার ড্যাম এলাকায় ফুল ভাসাতে আসা তোড়া চাকমা, রেনেসাঁ চাকমা ও রিবেং চাকমা জানান, দুই বছর ফুল বিজুর দিনে ফুল ভাসাতে চেঙ্গী নদীতে আসতে পারেননি। এবার প্রথম প্রহরে চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসিয়ে সুস্থ থাকার প্রার্থনা করেছেন।

উৎসব উপলক্ষে বয়োজ্যেষ্ঠরা বাড়িঘর ও আঙিনায় সোনা–রুপার পানি দিয়ে আসবারপত্র পরিষ্কার করেছেন। সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায়, গোয়ালঘরে এবং নদীর বা ছড়ার পাড়ে মোমবাতি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে বিজু উৎসব শেষ হবে।

ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ। আজ মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার রাবার ড্যাম এলাকায় চেঙ্গী নদীতে
ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের আয়োজনে ফুল বিজু উৎসব উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। শোভাযাত্রাটি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টাউন হলে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন টাক্সফোর্স চেয়ারম্যান সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত সাংসদ বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ।

আরও পড়ুন