বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রাখা অসুস্থ বুনো হাতিটি মারা গেছে

চিকিৎসাধীন অসুস্থ বুনো হাতিটি। গত শুক্রবার কক্সবাজারের ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেই বুনো হাতি মারা গেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মরা হাতিটিকে পার্কের হাতিরগোদা এলাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় কাদায় আটকে আহত মাদি হাতিটিকে ১৩ মে বিকেলে ট্রাকে করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনা হয়েছিল। এর পর থেকে খাওয়াদাওয়া করতে সমস্যা হচ্ছিল এটির। ফলে অনেকটা অভুক্ত থেকে বুনো হাতিটি মারা যায়।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে বুনো মাদি হাতিটি রাঙ্গুনিয়ার কাদায় আটকে পড়েছিল। অনেকে চেষ্টার পর হাতিটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মীরা বনাঞ্চলে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং মুখ দিয়ে পেটের ভেতর কাদামাটি ঢোকায় হাতিটি অস্থিরতায় ভুগছিল। এরপর সেটিকে চিকিৎসার জন্য কোদালা বন বিটের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। সেখানে পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। এতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় হাতিটিকে পাঠানো হয় সাফারি পার্কে। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মারা যায় হাতিটি।

সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, অসুস্থ হাতির চিকিৎসার জন্য ২২ মে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। পরদিন থেকে হাতির চিকিৎসা শুরু হয়। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ছিলেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক বিবেক চন্দ্র সূত্রধর। সদস্য ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ভজন চন্দ্র দাস, ঢাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (অব.) মো. ফরহাদ হোসেন, চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী। সদস্যসচিব ছিলেন পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন।

হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন বলেন, সাফারি পার্কে আনার পর থেকেই বুনো হাতিটি অনেকটাই চলনশক্তিহীন অবস্থায় ছিল। বয়স অনুপাতে হাতিটির যে পরিমাণ খাবার গ্রহণের কথা ছিল, এর সামান্যই গ্রহণ করত। অনেক সময় মুখ থেকে খাবার ফেলে দিত। এ ছাড়া অসুস্থ হওয়ার পর থেকে হাতিটির পায়খানা-প্রস্রাবও বন্ধ ছিল।

হাতিটি যে বাঁচবে না, তা চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর দিনই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্য চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী। তিনি বলেন, ‘হাতিটির পেটের ভেতর কাদা ঢুকে গিয়েছিল। এই কারণে হাতিটি খাওয়া ছেড়ে দেওয়ায় দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এরপরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলাম। কিন্তু বাঁচানো গেল না।’

আরও পড়ুন

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর বয়সী বুনো হাতিটিকে দৈনিক দুই হাজার টাকার স্যালাইন ও ওষুধ খাওয়ানো হতো। আশা করেছিলাম, হাতিটি সুস্থ হয়ে বনে ফিরতে পারবে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না। গতকাল বিকেলে মরা হাতির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।’