ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের খনগাঁও ইউপি নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে গুলিতে তিনজন নিহত ও আরও তিনজন আহত হওয়ার ঘটনায় থমথমে গ্রামগুলো স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বাজারের বন্ধ থাকা দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। এ ছাড়া বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকা গ্রামের পুরুষেরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করছেন। গ্রামে তাঁদের চলাচল ও ধান কাটার কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।
গত রোববার তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের দিন উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজিবি-পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হন। আহত হন আরও তিনজন। এ ঘটনার পর কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তাকে আটকে রাখা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবরুদ্ধ ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গত সোমবার পীরগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে। এর পর থেকেই গ্রেপ্তার-আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন সাত গ্রামের পুরুষেরা। শান্তিনগর, ঘ্যাননগর, রাঘবপুর, টাঙ্গনবাজার, লিলারহাট ও ঠাকুরতলী বাজারের দেড় শতাধিক দোকানও সেই থেকে বন্ধ ছিল।
গত রোববার তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের দিন উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজিবি-পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হন। আহত হন আরও তিনজন।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে ওই ছয় গ্রামের বাজারের চা-পরোটা, মুদি, সার, বেকারিসহ বিভিন্ন দোকান খুলতে দেখা গেছে। গ্রামের আমন ধানের খেতগুলোয় কিছু কিছু মানুষকে কাজকর্ম করতে দেখা গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদ জাহিদুর রহমান ওই সব গ্রাম ও বাজারে গণসংযোগ করেন। তিনি মানুষকে মামলার ভয় না করে নিজ নিজ দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করতে এবং নিজের বাড়িতে থেকে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চালিয়ে যেতে অনুরোধ জানান। খনগাঁও ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সহিদ হোসেনও পৃথকভাবে ওই দিন ওই সব বাজার ও গ্রামের মানুষকে মামলার ভয় না করার জন্য সাহস দেন।
এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য পুলিশের তিন সদস্যের কমিটি গত বুধবার বেলা ১১টায় ঘটনাস্থল সেই ভোটকেন্দ্র পীরগঞ্জের ঘিডোব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সভা করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান সে সময় বলেন, ‘আমরা প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকেই খুঁজছি। নিরীহ মানুষ কাউকে হয়রানি করা হবে না। আমরা সেটা দেখব।’ সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে এডিআইজি বলেন, ‘কোনো গ্রামবাসী ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ছেড়ে দেবেন না। সাধারণ মানুষের কোনো ভয় নেই।’
এরপরই গ্রামের লোকেরা মামলার ভয় কাটিয়ে বাড়িতে ফেরার সাহস পান। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গ্রামবাসীরা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেন। ঘিডোব গ্রামের তমিজউদ্দীন ও ইকরামুল হক বলেন, ‘পুলিশের বড় কর্মকর্তা, এমপি, নতুন চেয়ারম্যান আমাদের সাহস দিচ্ছেন। মামলার ভয় না করে আপন কাজ করে যেতে বলছেন। আমরা ওই সাহসে আবার কাজবাজ শুরু করেছি।’ টাঙ্গন বাজারের দোকানদার আলামিন বলেন, ‘ভয় করলে ভয় হয়। আমি কী কোনো দোষ করেছি যে মামলায় আমাকে পুলিশ ধরবে? আমি সাহস করে দোকান শুরু করেছি।’