বরিশাল বিভাগে জুলাইয়ে করোনা শনাক্ত ১৩ হাজারের বেশি, মৃত্যু ৪০১

করোনায় মৃত্যু
ফাইল ছবি

জুলাইয়ে ভয়ংকর এক মাস পার করল বরিশাল বিভাগের মানুষ। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয় বেশি ছিল এই মাসে। বিভাগে মোট করোনা শনাক্তের ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে সদ্য শেষ হওয়া জুলাই মাসে। এ মাসে মারা গেছেন ৪৪ দশমিক ১৩ শতাংশ রোগী।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জুলাইয়ে বরিশাল বিভাগে ১৩ হাজার ১৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনায় ও উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে ৪০১ জনের। এর মধ্যে ১৫৮ জন করোনায় ও ২৪৩ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩১ জুলাই বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ১৪৪। এর মধ্যে ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশই শনাক্ত হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর মে থেকে জুলাই, এই তিন মাসে। এ সংখ্যা ২৫ হাজার ২৫৪ জন।

বরিশাল বিভাগে করোনার প্রথম ঢেউ শুরু হয় গত বছরের ৯ এপ্রিল। পরে জুন মাসে বিভাগে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এবার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় চলতি বছরের মে মাসে। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ৭ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ ৬২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১১ জুলাই ৭১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়, ১৩ জুলাই ৮৭৯ জন। আর ১৯ জুলাই সংক্রমণের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯১। মে মাসে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর সংক্রমণ ভয়াবহ হয়ে ওঠে জুলাই মাসের শুরু থেকে। এরপর সংক্রমণ আর কমেনি। মে মাসে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪৪ জনের। জুনে ৮ গুণ বেড়ে শনাক্ত হয় ৮ হাজার ৯৫২ এবং জুলাইয়ে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ১৪৮।

জুলাইয়ে মৃত্যুর হারও বেশি

৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভাগে করোনায় মারা গেছেন ৪৬৯ জন। এর মধ্যে মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২০৭ জনের, যা মোট মৃত্যুর ৪৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। শুধু জুলাই মাসেই করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫৮ জনের। এ ছাড়া বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৭৭৬ জন। বরিশাল জেলায় করোনায় সবচেয়ে বেশি ১৫৪ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ৮০ জন পটুয়াখালীর। এ ছাড়া পিরোজপুরে ৭২, বরগুনায় ৬৬ ও ঝালকাঠিতে ৫৮ জন করোনায় মারা গেছেন। বিভাগে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হলেও সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার বরগুনায় ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। জুলাইয়ের শুরু থেকেই বরগুনায় মৃত্যু হার সবচেয়ে বেশি।

শিগগিরই সংক্রমণ কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ

সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে, শিগগিরই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ জন্য মানুষের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার দেশে কয়েক দফা বিধিনিষেধ আরোপ করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং আরও অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে জুলাইয়ে কঠোর বিধিনিষেধের পরেও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সংক্রমণ। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ায় সংক্রমণ এখন পুরোপুরি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে চলে গেছে।

ভাইরাস সংক্রমণের পর্যায়গুলোকে চার ভাগে ভাগ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রথম পর্যায়: বাইরের দেশে ভাইরাস ছড়িয়েছে, কিন্তু এখনো আমাদের দেশে প্রবেশ করেনি। দ্বিতীয় পর্যায়: ভাইরাস বিদেশ থেকে আসা কারও মধ্যে পাওয়া গেছে। তৃতীয় পর্যায়: ভাইরাসটি বিদেশফেরত মানুষের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের যখন সংক্রমিত করবে। যেটিকে লোকাল ট্রান্সমিশন বলা হয়। চতুর্থ পর্যায়: কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, যখন কারও শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়, যাঁর সম্প্রতি কোনো বিদেশভ্রমণের ইতিহাস নেই বা সে রকম কারও সংস্পর্শে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এ পর্যায়টি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেই সেটি মহামারিতে রূপ নেয়।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণেই সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। করোনা শনাক্ত রোগীদের মধ্যে বড় একটি অংশ এখন গ্রামের। করোনা ঠেকাতে বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টিকার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মানলেই কেবল সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।