বিলাইছড়ি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি চাইল জেএসএস

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় গুলি করে তিন গ্রামবাসীকে হত্যার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে।

গত ২১ জুন বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় তিনজনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিহত তিনজনই ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর। এ ঘটনায় দুটি শিশু গুলিবিদ্ধ হয়।

আজ রোববার গণমাধ্যমে জেএসএসের পক্ষ থেকে দলটির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার পাঠানো বিবৃতিতে ওই ঘটনার জন্য নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) দায়ী করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রতি কেএনএফ আত্মপ্রকাশ করেছে। বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন বলে জানা গেছে। কেএনএফ সম্প্রতি নিজেদের সংগঠনের নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে দাবি করেছে, রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। সেগুলো হলো বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি।

আরও পড়ুন
প্রতীকী ছবি

তারা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম—এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করেছে।

২১ জুন বিলাইছড়িতে হত্যাকণ্ডের পর কেএনএফের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে লেখা হয়, ‘আজ জুন ২১ তারিখ সন্ধ্যা ৬ ঘটিকার সময় কেএনএফ-এর স্পেশ্যাল কমান্ডো ফোর্স হেড-হান্টার টিম সন্ত্রাসী জেএসএস'র সশস্ত্র বাহিনী জেএলএ-এর জাইজাম (সাইজম) বেসমেন্ট ক্যাম্পে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। এতে জেএলএ বাহিনীর ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্হলে নিহত হয়। তবে আহত অবস্থায় ট্রেইনিসহ অন্যরা সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।’ পরে অবশ্য এই পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয় পেজ থেকে।

গতকাল জেএসএসের বিবৃতিতে বলা হয়, বড়থলির সাইজাম পাড়ার হত্যাকান্ডের পর থেকে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বড়থলি ও আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে অস্ত্রের মুখে হুমকি দিয়ে আসছিল। অন্যথায় সাইজাম পাড়ার ঘটনার মতো গুলি করে হত্যা এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভীতসন্ত্রস্ত তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিগত কয়েক মাস থেকে কেএনএফের সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী লুণ্ঠন করে আসছিল।

আরও পড়ুন

জেএসএস বিবৃতিতে বলে, ‘ঘোষণা দিয়ে তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর একের পর এক গ্রাম উচ্ছেদ করার পরও সরকারের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও রহস্যজনকও বটে।’
বিলাইছড়ির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জেএসএস।

ভীতসন্ত্রস্ত তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া এবং তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে গ্রামে পুনর্বাসনের দাবি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সাইজাম পাড়ায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি করা হয়।