ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর ভবন ধ্বংসস্তূপ, খোলা আকাশের নিচে দায়িত্ব নিলেন মেয়র

হেফাজতের হরতালে গত ২৮মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌরভবনে আগুনে দেয় হেফাজতের কর্মী–সমর্থকেরা। দাপ্তরিক কাজ করার কোনো পরিবেশ এখন পৌরভবনে নেই। তাই নবনির্বাচিত পৌর মেয়র নায়ার কবির ও কাউন্সিলরগণ খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় অনাড়ম্বর পরিবেশে দায়িত্ব গ্রহন ও প্রথম সভা করেন আজ। বেলা পৌনে ১২টার দিকেপ্রথম আলো

গত ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকেরা পৌর ভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। দাপ্তরিক কাজ করার কোনো পরিবেশ পৌর ভবনে এখন নেই। তাই নবনির্বাচিত পৌর মেয়র নায়ার কবির ও কাউন্সিলররা খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় অনাড়ম্বর পরিবেশে দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রথম সভা করেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পৌরসভার সামনের রাস্তায় ধ্বংসস্তূপের পাশেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আজ থেকে পৌর ভবনের সামনের সড়কে দুটি তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার কার্যালয়ের সামনের সড়কে পড়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপ। সকালে এর পাশেই দুটি তাঁবু টাঙানো হয়। দুই তাঁবুর পরই সড়কে খোলা আকাশের নিচে নবনির্বাচিত মেয়র নায়ার কবির, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরদের জন্য চেয়ার বসানো হয়। সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলররা বসে ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় পৌর মেয়র নায়ার কবির হাজির হন।

আজ থেকে পৌর ভবনের সামনের সড়কে দুটি তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয়বারের মতো নবনির্বাচিত পৌর মেয়র নায়ার কবিরের কার্যক্রম। পরে নায়ার কবির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সঙ্গে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলররাও দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানেই মেয়রসহ নবনির্বাচিত ১৭ জনের সাধারণ সভা হয়।

আরও পড়ুন

অন্যান্যবার নবনির্বাচিত মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরদের দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রথম সভায় থাকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। এবারই প্রথম ছিল না এমন কোনো আয়োজন। সবার মধ্যেই ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের সময় হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের ছাপ। অনুষ্ঠানে মেয়র নায়ার কবির বলেন, হেফাজতে হরতালের সময় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে পৌরসভা ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নকল নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বর্তমানে পৌর ভবনে দাপ্তরিক কাজ করার মতো পরিবেশ নেই। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় বসে মেয়রের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয়বারের মতো নবনির্বাচিত পৌর মেয়র নায়ার কবিরের কার্যক্রম। পরে নায়ার কবির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সঙ্গে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলররাও দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আজ বেলা পৌনে ১২টার দিকে
প্রথম আলো

নায়ার কবির বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের কার্যালয়, তাঁর নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি, পৌরসভা, রেলস্টেশন, ভূমি অফিসসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা আগুনে পোড়ানো হয়েছে। কেন এই জ্বালাও–পোড়াও? কেন এই সহিংসতা ও নাশকতা? তাঁরা কী বোঝাতে চাইছেন বা বার্তা দিতে চাইছেন? এটা কোন ধরনের আন্দোলন? তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পৌর নাগরিকেরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সে জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নাগরিক সেবা চালুর চেষ্টা চলছে। সবার সহযোগিতা না পেলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত পৌরসভার সেবা চালু করা সম্ভব হবে না।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চান।

আরও পড়ুন

এ সময় পৌরসভার সচিব মো. সামসুদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী নিকাশ চন্দ্র মিত্র, সহকারী প্রকৌশলী মো. কাউসার আহমেদ, সুমন দত্ত ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. কাউসার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগমনোনীত মেয়র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নায়ার কবির। গত ২৩ মার্চ চট্টগ্রামে তিনি মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৬৮ সাল। নায়ার কবির ১৫০ বছরের পুরোনো এই পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র। পৌরসভায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ৪ এপ্রিল সদর থানায় মামলা করা হয়। মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের সসিংসতায় ধ্বংসসতূপে পরিণত হওয়া পৌর ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে নবনির্বাচিত পৌর মেয়র নায়ার কবির ও কাউন্সিলরগণ অনাড়ম্বর পরিবেশে দায়িত্ব গ্রহন ও প্রথম সভা করেন আজ। বেলা পৌনে ১২টার দিকে
প্রথম আলো

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চারতলাবিশিষ্ট পৌরসভার মূল ভবন পুড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পৌর ভবনের আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা পুড়ে যাওয়ায় ৫০ লাখ টাকা, ১০ লাখ টাকার ২০টি স্টিলের আলমারি, ২০ লাখ টাকার ২৫টি কাঠের আলমারি, ১৬ লাখ টাকার ১৮টি কম্পিউটার, সাড়ে ৩ লাখ টাকার পাঁচটি ল্যাপটপ, ৬ লাখ টাকার চারটি ফটোকপি মেশিন, ১৭ লাখ টাকার ৩৪টি টেবিল, ৭ লাখ টাকার সাতটি সেক্রেটারিয়েট টেবিল, সাড়ে ৩ লাখ টাকার ১১৪টি চেয়ার, ৩০ লাখ টাকার পাঁচটি দুই টনের এসি মেশিন, স্বাস্থ্য শাখার ১২ লাখ টাকার ১২টি ডিপ ফ্রিজ, দেড় লাখ টাকার চারটি সাধারণ ফ্রিজ, ৫ কোটি টাকার ভ্যাকসিন, ২০টি ঝুলন্ত পাখা, ভান্ডারে রক্ষিত ৩৫ লাখ টাকার ১০ হাজার এলইডি বাতি, ৩ লাখ টাকার ৫০০টি এলইডি বাতি, ৩০ লাখ টাকার ৩ হাজারটি বাতি শেড, ৫০ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার, ৫০ লাখ টাকার শাবল, বেলচা, ঝাড়ু, টুকরি, গামবুট, ব্লিচিং পাউডার ও মশকনিধনের ফগার মেশিন পাঁচটি এবং ৫০ লাখ টাকার পৌর ভবনের ইলেকট্রিফিকেশন ক্ষতি হয়।

আরও পড়ুন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর, গত ২৬ মার্চ রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম ও চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে বিক্ষোভে বাধা দেওয়া ও হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা চালায় হেফাজত ও তার কর্মী-সমর্থকেরা।

এ ছাড়া হেফাজতের আগুনে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বিভিন্ন মডেলের ৮টি গাড়ি, ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ৮টি মোটরসাইকেল, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার দুটি গার্বেজ ট্রাক, আড়াই কোটি টাকার তিনটি রোড রোলার, ৩৫ লাখ টাকার মশকনিধন গাড়ি, ১৪ লাখ টাকার ২০টি রিকশা এবং ভান্ডারে রক্ষিত তিন কোটি টাকার খুচরা যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। পৌরসভার মালিকানাধীন সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনের ছয় কোটি টাকার ভবনেরও ক্ষতি হয়েছে। ১১ লাখ টাকা মূল্যের ৫৫০টি চেয়ার, ১০ লাখ টাকার ২০ সেট সোফা, ১ কোটি টাকা মূল্যের ২০টি পাঁচ টনের এসি, ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ১০টি দুই টনের এসি ও ৬ লাখ টাকা মূল্যের ১৫০টি ঝুলন্ত পাখা আগুনে পুড়ে গেছে।

আরও পড়ুন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর, গত ২৬ মার্চ রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম ও চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে বিক্ষোভে বাধা দেওয়া ও হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা চালায় হেফাজত ও তার কর্মী-সমর্থকেরা। জেলার প্রায় ৫৮টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় তাণ্ডব চালানো হয়, যার অধিকাংশ আগুনে পোড়ানো হয়। ২৮ মার্চ বেলা ১১টার দিকে হেফাজতের হরতালের দিন তাদের কর্মী-সমর্থকদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে পৌরসভা কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একই দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন ও খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবনসহ বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি। সহিংসতার ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ বলছে। তবে হেফাজতের দাবি, ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।