ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাজসেবার সেই উপপরিচালককে বরগুনায় বদলি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান। বিতর্কের মুখে বরগুনায় বদলি করা হয়েছে তাঁকে
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুদুল হাসানকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে বরগুনা জেলায় বদলি করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনার সময় ওএমএসের চাল বিতরণে হতদরিদ্রের তালিকায় স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ১৩ জনসহ সামর্থ্যবান ৯১ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা ও ওএমএস ডিলার শাহ আলমকে সমাজসেবা সম্মাননা প্রদান করে সমালোচনার মুখে পড়েন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান।

গত বছরের ১৩ মে শাহ আলমের ওএমএস ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। তিনি পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড জেলা শহরের কাউতলী এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন। এ ছাড়া তিনি এফবিসিসিআইয়ের সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার ও কমার্সের পরিচালক পদেও রয়েছেন।

আরও পড়ুন

২ জানুয়ারি জেলার সার্কিট হাউসে সমাজসেবা দিবসে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ওএমএস চাল নিয়ে অনিয়ম করা আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমকে সম্মাননা দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। ৩ জানুয়ারি এ বিষয়ে সমাজসেবার উপপরিচালকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চান জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কীভাবে শাহ আলমকে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সমাজসেবার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে ৫ জানুয়ারি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠান জেলা প্রশাসক। চিঠিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, করোনার সময়ে সরকারি চাল নিয়ে অনিয়ম করা আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমকে সমাজসেবা সম্মাননা প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠি সূত্রে জানা গেছে, শাহ আলমকে সম্মাননা প্রদানের জন্য উপপরিচালক মাসুদুল হাসান মনোনয়ন দেন। করোনাকালে বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য শাহ আলমের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। শাহ আলমকে সম্মাননা প্রদান করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কোন প্রক্রিয়ায় শাহ আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, লিখিতভাবে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সমাজসেবার উপপরিচালককে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি শহর সমাজসেবা সম্মাননা কমিটির মাধ্যমে শাহ আলমকে মনোনিত করা হয়েছে মর্মে জবাব দেন, যা সন্তোষজনক নয়। জাতীয় সমাজসেবা দিবসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে কোনো দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

আরও পড়ুন

করোনার সময় হতদরিদ্রের তালিকায় (ওএমএস কার্ড) শাহ আলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলম ও মেয়ে আফরোজাসহ নিজের পরিবারের ১৩ জন স্বজনের নাম পাওয়া যায়। শাহ আলম নিজেই ওই ওয়ার্ডের ওএমএসের ডিলার ছিলেন। এরপরই তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করা হয়।