ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থানা ও পুলিশের স্থাপনায় এলএমজি পোস্ট স্থাপন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ফটক সংলগ্ন ভবনের উপর নিরাপত্তা চৌকিতে নিয়োজিত পুলিশ সদস্য। আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে তোলাছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬–২৮ মার্চ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি ও সহিংসতার ঘটনার পর বিভিন্ন থানা, ফাঁড়িসহ অন্যান্য পুলিশ স্থাপনায় ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার কার্যালয়সহ সব থানা ভবন, পুলিশ ফাঁড়িতে ও ক্যাম্পে ২৭টি এলএমজি চেকপোস্ট বা নিরাপত্তাচৌকি স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।

আরও পড়ুন

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় পুলিশ সুপার কার্যালয়সহ ৯টি থানা, ৪টি পুলিশ ফাঁড়ি, ২টি তদন্ত কেন্দ্র ও ছয়টি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। পুলিশের এসব স্থাপনায় মোট ২৭টি এলএমজি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর থানায় দুটি, বাকি আট থানায় একটি করে মোট আটটি, চারটি পুলিশ ফাঁড়ি যথাক্রমে ১ নম্বর শহর পুলিশ ফাঁড়ি, ২ নম্বর শহর পুলিশ ফাঁড়ি, ইসলামপুর পুলিশ ফাঁড়ি ও ধরখার পুলিশ ফাঁড়িতে একটি করে মোট চারটি, দুটি তদন্ত কেন্দ্র যথাক্রমে চাতলপাড় তদন্ত কেন্দ্র ও আউলিয়া বাজার তদন্ত কেন্দ্রে একটি করে দুটি, ছয়টি পুলিশ ক্যাম্প যথাক্রমে সারকারখানা পুলিশ ক্যাম্প, পিডিবি পুলিশ ক্যাম্প, টোল প্লাজা পুলিশ ক্যাম্প, শিবপুর পুলিশ ক্যাম্প, ছলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্প, চম্পনগর পুলিশ ক্যাম্পে একটি করে মোট ছয়টি, জেলা পুলিশ লাইনসে চারটি ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটিসহ ২৭টি হালকা মেশিনগান (এলএমজি) চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ তিন দিনের সহিংসতায় সদর থানাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ১৫ জন নিহত হন। এ কারণে জেলার নয়টি থানায় ২৭ টি এলএমজি চেকপোষ্ট স্থাপন করা হয়েছে
প্রথম আলো

এসব নিরাপত্তা পোস্টে আধুনিক ও ভারী অস্ত্রসহ প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি থানা ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে ইতিমধ্যেই জনবল বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে কোনো দুষ্কৃতকারী যেন পুলিশ স্থাপনায় হামলা বা সহিংস ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আজ শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে টিএ রোডের ঘোড়াপট্টি সেতুসংলগ্ন সদর থানায় সরেজমিনে দেখা গেছে, থানার ফটকসংলগ্ন পশ্চিম দিকের ভবনের ওপরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে নিরাপত্তাচৌকি স্থাপন করেছে পুলিশ। বালু ও মাটির বস্তা দিয়ে ছাদের ওপর ওই নিরাপত্তাচৌকি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষিত দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজনকে একটি এলএমজি শহরের দিকে তাক করে রাখতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, সদর থানায় দুটি নিরাপত্তাচৌকি স্থাপন করা হয়েছে। একটি সামনে ও অপরটি থানার পেছনের দিকে। গত ২৬–২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার ঘটনায় আজ দুপুর পর্যন্ত সদর থানায় ৪৩টি মামলা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ফটক সংলগ্ন ভবনের উপর নিরাপত্তা চৌকিতে নিয়োজিত পুলিশ সদস্য
প্রথম আলো

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রইছ উদ্দিন (অপরাধ ও প্রশাসন) প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সব থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে ২৭টি নিরাপত্তাচৌকি বা এলএমজি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব নিরাপত্তা চেকপোস্টে ভারী অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। জেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড মোড় থেকে শহরের কাউতলী মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। তাঁরা দিনরাত দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২৬–২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার ঘটনায় আজ পর্যন্ত ৪৯টি মামলা হয়েছে। সদর থানায় ৪৩টি, আশুগঞ্জ থানায় ৩টি, সরাইল থানায় ২টি, আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আরও পড়ুন