বড়লেখায় ক্ষতিগ্রস্ত খাসিপুঞ্জি পরিদর্শনে নাগরিক প্রতিনিধিদল

মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) ও ক্ষতিগ্রস্ত খাসিয়াদের সঙ্গে কথা বলছেন নাগরিক সমাজ ও আদিবাসী ফোরাম প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। ৮ জুন মৌলভীবাজারের বড়লেখার আগারপুঞ্জিতে
প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আগারপুঞ্জি ও বনাখলাপুঞ্জি ঘুরে এসেছে নাগরিক সমাজ ও আদিবাসী ফোরামের একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপজেলার দুর্গম আগারপুঞ্জি ও বনাখলাপুঞ্জি ঘুরে দেখেন। এ সময় তাঁরা পুঞ্জির বাসিন্দা খাসিয়াদের সঙ্গে কথা বলেন। পানগাছ কেটে ফেলা ও জুম দখলের বিবরণ শোনেন।

প্রতিনিধিদলের সদস্যরা খাসি পানপুঞ্জির অধিবাসীদের আশ্বস্ত করেন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরাও এ দেশের নাগরিক। অন্য সব নাগরিকের মতো তাঁদেরও এ দেশের ভূমিসহ সব নাগরিক অধিকার ভোগ করার অধিকার আছে। তাঁদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সংরক্ষণের অধিকার আছে। তাঁরা একা নন, তাঁদের পাশে এ দেশের শুভচিন্তার সব মানুষ আছেন। যেকোনো সংকট, সমস্যায় এ দেশের নাগরিক সমাজ তাঁদের পাশে থাকবে।

আরও পড়ুন

৮ জুন সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আগারপুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) সুখমন আমসে, বনাখলা পানপুঞ্জির মান্ত্রী নরা ধারসহ অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলাপ করেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন, প্রাণপ্রকৃতি গবেষক পাভেল পার্থ, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজীম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আমিনুর রাসুল, সংগঠক মাসুদ আলম, আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ প্রমুখ।

সম্প্রতি বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আগারপুঞ্জির পানজুমের সহস্রাধিক পানগাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে বনাখলাপুঞ্জির খাসিয়া আদিবাসীদের ৭০ একর জুমের জায়গা দখল করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও সেখানে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করে একদল দুর্বৃত্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, একটি রাষ্ট্র কতটা ভালো চলে, তা মাপার গজকাঠি হলো সে রাষ্ট্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘু কিংবা জাতিগত সংখ্যালঘুরা কতটা ভালো আছে, তার ওপর। তাঁরা যদি ভালো থাকেন, তাহলে ধরে নেওয়া যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও ভালো আছেন। বড়লেখার দুটি ঘটনার খবর পেয়ে আমরা এসেছি। এই খবরগুলো আমাদের মন খারাপ করে দেয়। পানগাছ কর্তন ও জুম দখলের বিষয়ে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি তারা যেন নিরাপদে পানজুম করতে পারেন, এটাও নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পানপুঞ্জিগুলো পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদল ওই দিন বিকেলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়ার সঙ্গে দেখা করে পানপুঞ্জিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

সম্প্রতি বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আগারপুঞ্জির পানজুমের সহস্রাধিক পানগাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে বনাখলাপুঞ্জির খাসিয়া আদিবাসীদের ৭০ একর জুমের জায়গা দখল করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও সেখানে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করে একদল দুর্বৃত্ত। তবে জুম দখলের সাত দিন পর উপজেলা প্রশাসন ও থানা-পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পান জুমটি দখলমুক্ত করে খাসিয়াদের বুঝিয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়া ৭ জুন বিকেলে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জেলার কুলাউড়া উপজেলার কাঁকড়াপুঞ্জি পরিদর্শন করেন। কাঁকড়াপুঞ্জির বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁরা আলাপ করেন। রেহেনা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা-বাগান সম্প্রসারণের কথা বলে কাঁকড়াছড়া পানপুঞ্জির গাছ কাটার কারণে পুঞ্জির সদস্যদের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ বিষয়ে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, চা-বাগান সম্প্রসারণের নামে পুঞ্জির খাসি ও মান্দি জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক আছে। চা-বাগান সম্প্রসারণ হোক, তবে তা খালি জায়গায়। তাঁদের ঐতিহ্যগত থাকার অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। তাঁদের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। রাষ্ট্র একক কোনো জাতি, ধর্ম ও গোষ্ঠীর না। বহুত্ববাদী যে ঐতিহ্য আছে, সেটাকে ধরে রাখতে হবে। গাছ কেটে, মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না।