ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

ভোট গণনা শেষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সোমবার বিকেলে পাবনার চাটমোহরের এনায়েতুল্লাহ্ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়
হাসান মাহমুদ

শেষ হলো ২৪টি পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে টানা ভোটগ্রহণ। এখন চলছে ভোট গণনা। ২৪টি পৌরসভাতেই ভোট নেওয়া হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণ হওয়ায় মেয়র পদে কারা জিতলেন, সেই ফল পেতে খুব বেশি দেরি হবে না। তবে কাউন্সিলরদের ফল পেতে কিছুটা দেরি হতে পারে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ পৌরসভায় ভোটার উপস্থিতি ভালো ছিল।

২৪টি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ নিয়ে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কেন্দ্র গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চগড়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য। সীতাকুণ্ড পৌরসভায় ভোটগ্রহণের শুরুতেই একটি কেন্দ্রে গোলযোগ হয়। এ কারণে ২৫ মিনিটের মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পাবনার চাটমোহর পৌরসভার মেয়রপদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী বেলা ১২টার দিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। অনিয়মের অভিযোগ তুলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিএনপি প্রার্থী ও খুলনার চালনার বিএনপি প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।

এদিকে ঢাকার ধামরাই পৌরসভা নির্বাচনের ভোটের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিজেই ঘটান এই ঘটনা।

পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও কোনো কোনো পৌরসভার ভোট নিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে আঙুলের ছাপ না মেলা, বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, সরকারদলীয় মেয়রপ্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করা, নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারীরা মেয়রপদের ভোট, ভোটারকে দিতে না দিয়ে নিজেরাই দিয়ে দেওয়া, শৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরবতা পালন উল্লেখযোগ্য।

ভোট দিতে যাওয়ার আগে কেন্দ্রের বাইরে সিরিয়াল নম্বর মিলিয়ে নেন ভোটাররা। আজ সোমবার সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে
প্রথম আলো
আরও পড়ুন

সাংবাদিককে রক্তাক্ত করে ফোন কেড়ে নিলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা

ভোটকেন্দ্রের ভেতর দাঁড়িয়ে অনিয়ম ও কারচুপির ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিলেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান। একপর্যায়ে নিজের মুঠোফোনে কিছু ছবিও তোলেন। জহির ছবি তুলেছেন দেখে ক্ষিপ্ত হন ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আজিজুল হক। তিনি (জহির রায়হান) কেন কেন্দ্রের ভেতর ঢুকলেন, কার অনুমতি নিয়েছেন, কেন ছবি তুলছেন—এমন প্রশ্নে জর্জরিত করেন সাংবাদিককে। একপর্যায়ে জোর করে জহিরের মুঠোফোন নিয়ে নিতে উদ্যত হন তিনি। গায়েও হাত তোলেন।

হাতাহাতির একপর্যায়ে জহিরের ডান হাত রক্তাক্ত হয়। তখন মুঠোফোনটি আর নিজের কাছে রাখতে পারেননি তিনি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সেটি নিয়ে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক কর্মীর হাতে দেন। ওই কর্মী তখন মুঠোফোন থেকে সব ছবি মুছে (ডিলিট) দেন। এরপর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুঠোফোনটি তুলে দেন একজন পুলিশ কর্মকর্তার হাতে। এই ঘটনা দুপুর ১২টার দিকের। ঘটনাস্থল ঢাকার ধামরাই পৌরসভার হুজেরিটোলা এলাকার কলেজিয়েট স্কুল।

রক্তাক্ত জহিরকে সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যান প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক অরূপ রায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর জহির এখন ধামরাইয়ে অবস্থান করছেন। পুলিশের কাছ থেকে মুঠোফোনটিও ফেরত পেয়েছেন।

আরও পড়ুন
রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মলেজানের মতো অনেক প্রবীণ নাগরিক ভোট দিতে কেন্দ্রে যান। সোমবার পুঠিয়া পৌরসভার গণ্ডগোহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

আঙুলের ছাপ মেলাতে ঝামেলা

রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভায় কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থীসহ অনেক ভোটারের আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) না মেলায় তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। তাঁদের ফের বিকেলে ভোট দিতে বলেছেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজন নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রবিউল ইসলাম ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আল মামুন খান সকালে সাড়ে নয়টার দিকে গণ্ডগোহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়েছেন। নারকেলগাছ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম আজম নয়ন ভোট দিয়েছেন পুঠিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে ধানের শীষের প্রার্থী আল মামুন খান অভিযোগ করেছেন, কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকেরা তাঁর এজেন্টদের বের করে দিতে চেয়েছিল। পরে গিয়ে তিনি ঠিক করে দিয়েছেন।

সকালে পৌরসভার ২ নম্বর গণ্ডগোহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন ভোটার ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বলতে থাকেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। তাঁদের দুপুরের পর আবার কেন্দ্রে যেতে বলেছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

ওই কেন্দ্রের ভোটার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় তিনি ভোট দিতে পারেননি। তাঁর হাতে কোনো সমস্যা নেই। একই কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডালিম প্রতীকের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মো. দুলাল মিয়াকে। তিনি বলেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় তিনি ভোট দিতে পারেননি। একজন প্রার্থী হিসেবে ভোট দিতে না পেরে হতাশ তিনি। তিনি বলেন, ‘আরও বহু মানুষ ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা কি আর ভোট দিতে আসবেন?’

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় কিছুসংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। তাঁদের বেলা তিনটার দিকে আসতে বলা হয়েছে। তাঁদের সবার ভোট নেওয়া হবে। কেউ ভোট না দিয়ে যাবেন না।

আরও পড়ুন
হাতাহাতির পর পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। খুলনার চালনা পৌর এলাকার শিশু কানন প্রি-ক্যাডেট স্কুল কেন্দ্রে
সাদ্দাম হোসেন

খুলনার চালনায় ভোটকেন্দ্রে হাতাহাতি, পুলিশের লাঠিপেটা

খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনে ভোট চলাকালে একটি কেন্দ্রে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। সোমবার বেলা ১১টার দিকে চালনা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিশু কানন প্রি-ক্যাডেট স্কুলকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস ও স্বতন্ত্র জগ প্রতীকের প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে কেন্দ্রে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ভোটারদের কয়েক জনের ভাষ্য, জগ প্রতীকের এক সমর্থক ভোট দিতে গেলে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট তাঁকে বাধা দেন। ওই ভোটার বাইরে এসে জোরে জোরে অভিযোগ করতে থাকলে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। পরে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।

কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা সরদার ইব্রাহিম হেসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এখন পরিবেশ শান্তিপূর্ণ আছে।

এর আগে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চালনা এমএম কলেজ কেন্দ্রে ওই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে অপর একটি হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

পঞ্চগড়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর

পঞ্চগড় পৌরসভা নির্বাচনে সোমবার বেলা ১১টার দিকে পঞ্চগড় কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতন কেন্দ্রের সামনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলমগীরের গাড়ি ভাঙচুর করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রবিউল ইসলাম নামের একজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে শহরের পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিটি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ ছাড়া নতুন বস্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, নুরুন আলা নুর কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্র এবং পঞ্চগড় উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন নারী ভোটাররা। সোমবার সকালে বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজ কেন্দ্রে
সাইয়ান

পাবনার চাটমোহরে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন

পাবনার চাটমোহর পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর দুই ঘণ্টা পরই কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুই প্রার্থী ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছিলেন।

ভোট বর্জন করা দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা রেজাউল করিম এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান।

অন্যদের মধ্যে নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাখোয়াত হোসেন ও বিএনপির প্রার্থী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. আসাদুজ্জামান।

সকাল নয়টার দিকে চাটমোহর পৌর সদরের সবুজ সংঘ ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন আবদুল মান্নান। তাঁর প্রতীক ছিল মোবাইল ফোন। সকাল ১০টার দিকে পৌর এলাকার ছোট শালিখা মহল্লায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন মির্জা রেজাউল করিম। তাঁর প্রতীক ছিল জগ।

দুই প্রার্থী অভিযোগ করেন, সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর পর আওয়ামী লীগের এজেন্ট ও কর্মীরা অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেন। এ ছাড়া সব ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে নেন। বুথে ইভিএমের গোপন কক্ষে নৌকার এজেন্টরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার পর ভোটারদের জোর করে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছেন। বিষয়টি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ফলে তাঁরা বাধ্য হয়ে ভোট বর্জন করছেন বলে জানান।

আরও পড়ুন